যশোরে পুলিশ সদস্যের বাড়িতে শিশু সন্তান নিয়ে গৃহবধূর অনশন

ইয়ানূর রহমান : যশোরে এক পুলিশ সদস্যের বাড়িতে শিশু সন্তান নিয়ে অনশন করেছেন এক গৃহবধূ। ঘটনাটি ঘটেছে যশোর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে। টাঙ্গাইল থেকে আসা শারমিন আক্তার নামের ওই নারী আজ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল থেকে অনশন শুরু করেন। তাকে দেখেই সাদমান হাসান নামের ওই পুলিশ কনস্টেবলের মা বাড়িতে তালা লাগিয়ে অন্যত্র চলে যান।
এ সময় শারমিন আমরন অনশনের ঘোষনা দেন। পরে স্থানীয়রা শাশুড়িকে ডেকে এনে পক্ষের সাথে কথা বলে তারা শারমিনকে বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে বিকেলে বাড়িতে ফেরত পাঠান।
এ ঘটনায় বাহাদুরপুর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ সময় শারমিন ও তার শিশু সন্তানের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ঔ গৃহবধু।
শারমিনের দাবি, বাহাদুরপুর গ্রামের রফিক উদ্দিনের ছেলে সাদমান হোসেন রাকিবের সঙ্গে তার ২০১৭ সালে ফেসবুকে পরিচয় হয়। তখন রাকিব বেকার ছিলেন। পরে তিনি খুলনা আরআরএফ-এ কনস্টেবল পদে চাকরি পান। ২০২২ সালে সাদমান শারমিনকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় শারমিনের পরিবার সোনা ও ঘরের আসবাবসহ ছয় লাখ টাকার মালামাল দেন সাদমানকে। পরে চাকরিরত অবস্থায় সাদমান তাকে নিয়ে কুষ্টিয়ায় বাসা ভাড়া করে রাখেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় বদলি হলে সেখানেও তিনি স্ত্রীকে নিয়ে বাসা ভাড়া করে বসবাস করেন। এই সময় শারমিনের গর্ভে সন্তান আসে। পরে অসুস্থ হয়ে তিনি টাঙ্গাইলের উফুলকি গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে যান। গর্ভে সাত মাসের সন্তান থাকা অবস্থায় তিনি জানতে পারেন, সাদমানের আরেক স্ত্রী রয়েছে যা গোপন রেখেই তিনি শারমিনকে বিয়ে করেছিলেন।
এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়। এরপর তাদের ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এরই মাঝে সাদমান শারমিনের কাছে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় সাদমান বিভিন্নভাবে নির্যাতন শুরু করেন। পরে টাকা না পাওয়ায় যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল সাদমান টাঙ্গাইলে গেলে শারমিনের পরিবার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি জানান ৫ লাখ টাকা যৌতুক ছাড়া শারমিন ও তার সন্তানকে তিনি ঘরে তুলবেন না। পরে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন। এরপর থেকেই দোরে দোরে ঘুরছেন শারমিন।
এ ঘটনায় তিনি টাঙ্গাইলের আদালতে মামলা করেছেন। কিন্তু স্বামী পুলিশ সদস্য হওয়ায় কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। এমনকি সব প্রমাণপত্র নিয়ে খুলনা ডিআইজির কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন। ডিআইজি বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিলেও পুলিশ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মামলা ও অভিযোগ করায় সাদমান বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি দিচ্ছেন।
অন্যদিকে শারমিনের পরিবারও তাদের ভরণপোষণ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে তিনি যশোরে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে উঠেন। এদিকে সকালে শারমিনের অবস্থান জানতে পেরে স্থানীয়রা তাকে ও তার সন্তানকে দেখে হতবাক হন। তারা বিষয়টি নিয়ে সাদমানের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন। পরে বিকেলে শিশু বাচ্চাকে নিয়ে শারমিন এলাকা ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কনস্টেবল সাদমান হাসান বলেন, শারমিন তার স্ত্রী ছিলেন, কিন্তু তিন মাস আগে তালাক দেওয়া হয়েছে। শিশুটি তার সন্তান বলেও তিনি স্বীকার করেন।
তিনি আরও বলেন, শারমিন আদালতে মামলা করেছেন এবং খুলনা রেঞ্জ অফিসে অভিযোগ করেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা হবে, তবে তাকে ঘরে তুলবেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।#













