ঢাকায় মেট্রোরেলের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি যাত্রীদের, বিশ্বের বড় শহরগুলোর তুলনায় অনেক কম সময় চলাচল
📍 ঢাকা, ১১ এপ্রিল ২০২৫ — বিশ্বের বিভিন্ন বড় শহরে মেট্রোরেল চলে ভোর থেকে গভীর রাত, কোথাও কোথাও চলে ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু ঢাকায় এখনো সীমিত সময় মেট্রোরেল চালু থাকায় যাত্রীদের মধ্যে বাড়ছে অসন্তোষ। তারা বলছেন, মেট্রোরেলের সময়সীমা অন্তত রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বাড়ানো উচিত।
ঢাকায় বর্তমানে মেট্রোরেল উত্তরা থেকে প্রথম যাত্রা শুরু করে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে এবং শেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টায়। মতিঝিল থেকে ট্রেন চলে সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। ফলে শেষ ট্রেনটি রাত ১০টা ২০ মিনিট নাগাদ উত্তরা পৌঁছায়।
যাত্রীরা বলছেন, এই সময়সীমা শহরের বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই নয়। রাত ১০টার পরও ঢাকার রাস্তায় বিপুলসংখ্যক মানুষ চলাচল করেন। তখন বাসের সংখ্যা কমে যায়, চড়া ভাড়ায় অটোরিকশা কিংবা অনিরাপদ ব্যাটারিচালিত রিকশাই একমাত্র ভরসা।
মিরপুরের পল্লবিতে বসবাসকারী এক নারী যাত্রী, যিনি পান্থপথের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, বলেন, “মেট্রোরেলে যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য পাই, কিন্তু রাতের বেলা দোকান বন্ধ করে ফিরতে গিয়ে প্রায়ই মেট্রো মিস করি। সময় যদি আরেকটু বাড়ত, অনেকটাই সুবিধা হতো।”
🌍 বিশ্বের শহরগুলোর সময়সূচি
বিশ্বের বড় শহরগুলোর মেট্রোরেল ব্যবস্থায় দেখা যায়:
-
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মেট্রোরেল চলে সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত।
-
দিল্লি ও মুম্বাইয়ে সকাল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলে।
-
কলকাতায় সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত।
-
টোকিও, ব্যাংকক ও বেইজিংয়ে ভোর ৫টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করে।
-
প্যারিসে মেট্রো চলে ভোর সাড়ে ৫টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত, ছুটির দিনে আরও দীর্ঘ সময়।
-
নিউইয়র্ক, বার্লিন, লন্ডন– এসব শহরে মেট্রোরেল চলে ২৪ ঘণ্টাই বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেয়।
🛤 ঢাকার বর্তমান অবস্থা
ঢাকায় মেট্রোরেল চালু হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে। তখন শুধুমাত্র উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সীমিত সময়ে চলাচল করত। ধাপে ধাপে মতিঝিল পর্যন্ত সম্প্রসারণের পাশাপাশি সময়ও কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। তবে এখনো মেট্রোরেল চলে গড়ে ১৫ ঘণ্টা, যেখানে প্রস্তাবে বলা হয়েছিল মেট্রোরেল ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, “ট্রেন সংখ্যা ও সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে সক্রিয়ভাবে চিন্তা-ভাবনা চলছে। তবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল এখনো কিছুটা ঘাটতির মধ্যে আছে।”
বর্তমানে দিনে গড়ে প্রায় ৪ লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করছেন। ভাড়াও তুলনামূলক বেশি হলেও সময় ও নিরাপত্তার কারণে মেট্রোরেল জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের যানজট ও পরিবহন সংকট মোকাবিলায় মেট্রোরেল সময়মতো এবং দীর্ঘ সময় চললে উপকার হবে সবার।
🚦 সময় বাড়ানো কি সম্ভব?
বিশেষজ্ঞ ও যাত্রীদের মতে, রাত সাড়ে ১১টা বা মধ্যরাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু রাখা সম্ভব এবং জরুরি। রাজধানীর জীবনযাত্রা এখন অনেকটাই রাতমুখী। দোকানপাট, অফিস কিংবা বিনোদনের স্থানগুলো অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। ফলে মেট্রোরেলের সময় বাড়ালে তা শহরের অর্থনীতি ও নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বড় অবদান রাখবে।
ছবি সূত্র: প্রথম আলো / ডিএমটিসিএল