১০:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

প্রতুল মুখোপাধ্যায় বাংলা গানের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর চিরতরে থেমে গেল

ডেস্ক নিউজ

ছবি: সংগৃহীত

৮২ বছর বয়সে কিংবদন্তি শিল্পীর প্রয়াণ, রেখে গেলেন অমূল্য সঙ্গীতভাণ্ডার

বাংলা গানের বিশিষ্ট গায়ক, গীতিকার এবং সুরকার প্রতুল মুখোপাধ্যায় আজ সকালে (১৫ ফেব্রুয়ারি) কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অগ্ন্যাশয়ের জটিলতা ও বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর প্রয়াণে বাংলা সঙ্গীতজগতে এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হলো।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং প্রয়াত শিল্পীর পরিবার ও অসংখ্য ভক্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।


জন্ম ও সঙ্গীতজীবনের সূচনা

প্রতুল মুখোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে। দেশভাগের সময় পরিবারের সঙ্গে তিনি ভারতে চলে আসেন এবং পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় শৈশব কাটান। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় সুরারোপ করেন, যা তাঁর সঙ্গীতজীবনের সূচনা বলে ধরা হয়।

ষাটের দশকের শেষভাগে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকেন এবং ধীরে ধীরে বাংলা গানের এক অনন্য প্রতিবাদী কণ্ঠ হয়ে ওঠেন।


‘আমি বাংলায় গান গাই’ থেকে ‘ডিঙা ভাসাও সাগরে’ – বাংলা গানের এক অনন্য অধ্যায়

প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান শুধু বিনোদনের জন্য ছিল না, বরং তা সমাজের বার্তাবাহকও ছিল। তাঁর গানগুলোতে বাঙালির সংগ্রাম, বেদনা, প্রেম, মানবিকতা ও প্রতিবাদ উঠে এসেছে।

তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় গান ‘আমি বাংলায় গান গাই’—যা বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসার এক অমর প্রতীক। এটি বাঙালি জাতির অনুভূতির সঙ্গে গভীরভাবে মিশে গেছে। এছাড়াও তাঁর আরেকটি কালজয়ী সৃষ্টি ‘ডিঙা ভাসাও সাগরে’—যা সংগ্রামের গান হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।


সঙ্গীতজগতে অবদান ও জনপ্রিয় অ্যালবাম

প্রতুল মুখোপাধ্যায় প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নতুন আঙ্গিকে বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • পাথরে পাথরে নাচে আগুন (১৯৮৮)
  • যেতে হবে (১৯৯৪)
  • ওঠো হে (১৯৯৪)
  • কুট্টুস কাট্টুস (১৯৯৭)
  • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা (২০০০)
  • তোমাকে দেখেছিলাম (২০০০)
  • স্বপনপুরে (২০০২)
  • অনেক নতুন বন্ধু হোক (২০০৪)
  • হযবরল (২০০৪)
  • দুই কানুর উপাখ্যান (২০০৫)
  • আঁধার নামে (২০০৭)

শেষ দিনগুলো ও বিদায়বেলা

গত কয়েক মাস ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। ফেব্রুয়ারি ১২ তারিখে তাঁকে গুরুতর অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর নিউরোলজি ও ইএনটি (কান, নাক, গলা) বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছিল। পরে একটি অস্ত্রোপচারের পর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি ঘটে।

আজ সকালে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


প্রতুল মুখোপাধ্যায়: এক চিরস্মরণীয় নাম

প্রতুল মুখোপাধ্যায় বাংলা গানের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর গানগুলো বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাঁর মৃত্যুতে আমরা শুধু একজন গায়ককে হারাইনি, হারিয়েছি বাংলা গানের এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে।

বাংলা প্রভাতের পক্ষ থেকে আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি। তাঁর গান আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।


(বাংলার প্রভাতের বিশেষ প্রতিবেদন)

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০৫:৪২:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
২৫

প্রতুল মুখোপাধ্যায় বাংলা গানের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর চিরতরে থেমে গেল

আপডেট: ০৫:৪২:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

৮২ বছর বয়সে কিংবদন্তি শিল্পীর প্রয়াণ, রেখে গেলেন অমূল্য সঙ্গীতভাণ্ডার

বাংলা গানের বিশিষ্ট গায়ক, গীতিকার এবং সুরকার প্রতুল মুখোপাধ্যায় আজ সকালে (১৫ ফেব্রুয়ারি) কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অগ্ন্যাশয়ের জটিলতা ও বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর প্রয়াণে বাংলা সঙ্গীতজগতে এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হলো।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং প্রয়াত শিল্পীর পরিবার ও অসংখ্য ভক্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।


জন্ম ও সঙ্গীতজীবনের সূচনা

প্রতুল মুখোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে। দেশভাগের সময় পরিবারের সঙ্গে তিনি ভারতে চলে আসেন এবং পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় শৈশব কাটান। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় সুরারোপ করেন, যা তাঁর সঙ্গীতজীবনের সূচনা বলে ধরা হয়।

ষাটের দশকের শেষভাগে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকেন এবং ধীরে ধীরে বাংলা গানের এক অনন্য প্রতিবাদী কণ্ঠ হয়ে ওঠেন।


‘আমি বাংলায় গান গাই’ থেকে ‘ডিঙা ভাসাও সাগরে’ – বাংলা গানের এক অনন্য অধ্যায়

প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান শুধু বিনোদনের জন্য ছিল না, বরং তা সমাজের বার্তাবাহকও ছিল। তাঁর গানগুলোতে বাঙালির সংগ্রাম, বেদনা, প্রেম, মানবিকতা ও প্রতিবাদ উঠে এসেছে।

তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় গান ‘আমি বাংলায় গান গাই’—যা বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসার এক অমর প্রতীক। এটি বাঙালি জাতির অনুভূতির সঙ্গে গভীরভাবে মিশে গেছে। এছাড়াও তাঁর আরেকটি কালজয়ী সৃষ্টি ‘ডিঙা ভাসাও সাগরে’—যা সংগ্রামের গান হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।


সঙ্গীতজগতে অবদান ও জনপ্রিয় অ্যালবাম

প্রতুল মুখোপাধ্যায় প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নতুন আঙ্গিকে বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • পাথরে পাথরে নাচে আগুন (১৯৮৮)
  • যেতে হবে (১৯৯৪)
  • ওঠো হে (১৯৯৪)
  • কুট্টুস কাট্টুস (১৯৯৭)
  • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা (২০০০)
  • তোমাকে দেখেছিলাম (২০০০)
  • স্বপনপুরে (২০০২)
  • অনেক নতুন বন্ধু হোক (২০০৪)
  • হযবরল (২০০৪)
  • দুই কানুর উপাখ্যান (২০০৫)
  • আঁধার নামে (২০০৭)

শেষ দিনগুলো ও বিদায়বেলা

গত কয়েক মাস ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। ফেব্রুয়ারি ১২ তারিখে তাঁকে গুরুতর অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর নিউরোলজি ও ইএনটি (কান, নাক, গলা) বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছিল। পরে একটি অস্ত্রোপচারের পর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি ঘটে।

আজ সকালে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


প্রতুল মুখোপাধ্যায়: এক চিরস্মরণীয় নাম

প্রতুল মুখোপাধ্যায় বাংলা গানের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর গানগুলো বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাঁর মৃত্যুতে আমরা শুধু একজন গায়ককে হারাইনি, হারিয়েছি বাংলা গানের এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে।

বাংলা প্রভাতের পক্ষ থেকে আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি। তাঁর গান আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।


(বাংলার প্রভাতের বিশেষ প্রতিবেদন)