০৭:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

১০ নভেম্বর দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান

নিউজ ডেস্ক

অবশেষে দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবনের ইতি টানছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১০ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরতে পারেন। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক উপদেষ্টা জানান, ‘অনেক যদি-কিন্তুর পর এখন স্পষ্ট যে আমাদের নেতা নভেম্বরের মাঝামাঝিতে দেশে ফিরতে চান। নভেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যে তিনি ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ছাড়তে পারেন।

দলীয় সূত্র জানায়, তারেক রহমান তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যাত্রা করবেন। যাত্রার আগে ওমরা পালনের জন্য সৌদি আরবে যেতে পারেন। জানা গেছে, সম্প্রতি তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দুই দেশের কূটনীতিক সাক্ষাৎ করেন। তাদের একজন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। সেখানেও তারেক রহমান দ্রুত দেশে ফেরার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন যে, তিনি দ্রুতই দেশে ফিরে আসবেন এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সম্প্রতি বলেছেন, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন, তবে চূড়ান্ত তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি।

বিএনপির লন্ডন প্রবাসী নেতারা জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বরের যেকোনো দিন দেশে ফিরবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেটা নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে হতে পারে। তবে এ বিষয়ে কোনো নেতাই মিডিয়ায় তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। তারা বলছেন, নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারেক রহমান। সেজন্য দেশে তার থাকা, নিরাপত্তা ও নানা বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজেই বলেছেন তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন। সেটা অবশ্যই নির্বাচনের আগে। তিনি এটাও বলেছেন যে, নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাহলে ধরে নিতে হবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তিনি দেশে ফিরবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এনামুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এটুকু বলতে পারি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেদিন আসার কথা বলবেন, সেটাই সঠিক। অনুমান করে লাভ নেই। তবে উনি খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন এটা সঠিক।

দলীয় সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে তারেক রহমানের জন্য ট্রাভেল পাস ইস্যুসহ সব প্রক্রিয়া চলছে। তারেক রহমান বর্তমানে ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন (আইএলআর) স্ট্যাটাসে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। আইএলআর স্ট্যাটাসে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস, কাজ ও পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া যায়; ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্যও আবেদন করা যায়।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ১/১১ সরকারের সময় চিকিৎসার জন্য স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও মেয়ে জায়মা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই সময় থেকেই তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। লন্ডনে থেকেই তিনি বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, অর্থ পাচার এবং সারা দেশব্যাপী মানহানির মামলাসহ আরও অন্তত ২০টির বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে তারেক রহমানের বিপক্ষে অর্ধশতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এসব মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় শেখ হাসিনার সরকারের সময় তারেক রহমানের যাবজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে তারেক রহমান একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।

তারেক রহমানের নিরাপত্তার সার্বিক প্রস্তুতি

দেশে ফিরলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিরাপত্তার ইস্যুটিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। তার নিরাপত্তায় বিশেষ প্রস্তুতিও গ্রহণ করছে দলটি। তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য তারেক রহমানের জন্য জাপান থেকে একটি বুলেটপ্রুফ এসইউভি কেনার প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে গাড়ি দুটির অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ‘তারেক রহমান দেশে ফিরলে আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেব। বিএনপির সব যৌক্তিক অনুরোধ বিবেচনা করা হবে। বিএনপির নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনার পর গণতন্ত্রের নতুন যাত্রায় নানা বাধা আসতে পারে। এই যাত্রায় তারেক রহমান সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন, তাই তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ১০:৩২:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
৩০

১০ নভেম্বর দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান

আপডেট: ১০:৩২:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

অবশেষে দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবনের ইতি টানছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১০ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরতে পারেন। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক উপদেষ্টা জানান, ‘অনেক যদি-কিন্তুর পর এখন স্পষ্ট যে আমাদের নেতা নভেম্বরের মাঝামাঝিতে দেশে ফিরতে চান। নভেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যে তিনি ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ছাড়তে পারেন।

দলীয় সূত্র জানায়, তারেক রহমান তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যাত্রা করবেন। যাত্রার আগে ওমরা পালনের জন্য সৌদি আরবে যেতে পারেন। জানা গেছে, সম্প্রতি তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দুই দেশের কূটনীতিক সাক্ষাৎ করেন। তাদের একজন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। সেখানেও তারেক রহমান দ্রুত দেশে ফেরার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন যে, তিনি দ্রুতই দেশে ফিরে আসবেন এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সম্প্রতি বলেছেন, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন, তবে চূড়ান্ত তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি।

বিএনপির লন্ডন প্রবাসী নেতারা জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বরের যেকোনো দিন দেশে ফিরবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেটা নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে হতে পারে। তবে এ বিষয়ে কোনো নেতাই মিডিয়ায় তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। তারা বলছেন, নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারেক রহমান। সেজন্য দেশে তার থাকা, নিরাপত্তা ও নানা বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজেই বলেছেন তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন। সেটা অবশ্যই নির্বাচনের আগে। তিনি এটাও বলেছেন যে, নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাহলে ধরে নিতে হবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তিনি দেশে ফিরবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এনামুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এটুকু বলতে পারি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেদিন আসার কথা বলবেন, সেটাই সঠিক। অনুমান করে লাভ নেই। তবে উনি খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন এটা সঠিক।

দলীয় সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে তারেক রহমানের জন্য ট্রাভেল পাস ইস্যুসহ সব প্রক্রিয়া চলছে। তারেক রহমান বর্তমানে ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন (আইএলআর) স্ট্যাটাসে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। আইএলআর স্ট্যাটাসে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস, কাজ ও পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া যায়; ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্যও আবেদন করা যায়।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ১/১১ সরকারের সময় চিকিৎসার জন্য স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও মেয়ে জায়মা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই সময় থেকেই তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। লন্ডনে থেকেই তিনি বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, অর্থ পাচার এবং সারা দেশব্যাপী মানহানির মামলাসহ আরও অন্তত ২০টির বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে তারেক রহমানের বিপক্ষে অর্ধশতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এসব মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় শেখ হাসিনার সরকারের সময় তারেক রহমানের যাবজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে তারেক রহমান একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।

তারেক রহমানের নিরাপত্তার সার্বিক প্রস্তুতি

দেশে ফিরলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিরাপত্তার ইস্যুটিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। তার নিরাপত্তায় বিশেষ প্রস্তুতিও গ্রহণ করছে দলটি। তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য তারেক রহমানের জন্য জাপান থেকে একটি বুলেটপ্রুফ এসইউভি কেনার প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে গাড়ি দুটির অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ‘তারেক রহমান দেশে ফিরলে আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেব। বিএনপির সব যৌক্তিক অনুরোধ বিবেচনা করা হবে। বিএনপির নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনার পর গণতন্ত্রের নতুন যাত্রায় নানা বাধা আসতে পারে। এই যাত্রায় তারেক রহমান সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন, তাই তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।