১০:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

১৫ বছরের কিশোরীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন: বাবার বিরুদ্ধে চুরির অপবাদের প্রতিবাদ করায় নির্মমতা

ডেস্ক নিউজ

ছয় ঘণ্টা গাছের সঙ্গে বাঁধা রেখে মারধর, পুলিশ উদ্ধার করে কিশোরীকে! ছবি : সংগৃহিত 

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় এক মর্মান্তিক ঘটনায় ১৫ বছরের এক কিশোরীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। বাবার বিরুদ্ধে চুরির অপবাদ দেওয়ায় সে প্রতিবাদ করলে এই নির্মমতা চালানো হয়। টানা ছয় ঘণ্টা গাছে বাঁধা রেখে কিশোরীটিকে মারধর করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের একটি গ্রামে।

ঘটনার পটভূমি

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী কিশোরীটি উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার ছোট বোন (৯) হৃদরোগে ভুগছিল। চিকিৎসার খরচের জন্য কিশোরীর দাদি তার বাবাকে একটি গরু দেন। পরে কিশোরীর দূরসম্পর্কের দাদা আবদুল কাদের (সাবেক ইউপি সদস্য) ওই গরু চুরির অভিযোগ এনে কিশোরীর বাবাকে হুমকি দেন।

কিশোরী তার বাবার বিরুদ্ধে এই অপবাদের প্রতিবাদ করলে আবদুল কাদেরের উঠানে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত টানা ছয় ঘণ্টা গাছে বাঁধা রেখে কিশোরীটিকে মারধর করা হয়। তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করা হয় এবং হাঁটু, গলা ও পিঠে জখম করা হয়।

পুলিশের হস্তক্ষেপ

ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। বেলা তিনটার দিকে পুলিশ কিশোরীটিকে উদ্ধার করে। তবে অভিযুক্ত আবদুল কাদের ও তার সহযোগীরা পুলিশের আগমনের খবর পেয়ে পালিয়ে যান।

কিশোরীটিকে উদ্ধার করে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। তার মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে মায়া বেগম নামের এক নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। কিশোরী লিখিত অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় ইউপি সদস্যের বক্তব্য

ঘটনাস্থলের স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ বলেন, “কিশোরীর বোনের চিকিৎসার জন্য তার বাবা জোর করে তার মায়ের একটি গরু নিয়ে বাসায় বেঁধে রাখেন। পরে গরুটি ফিরিয়ে আনতে গেলে কিশোরী তার দাদিকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এতে দাদি অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকার নারীরা তাকে বেঁধে রাখেন।”

তবে কিশোরী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারা বলছেন, গরুটি দাদি স্বেচ্ছায় দিয়েছিলেন এবং চুরির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

সামাজিক মাধ্যমের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়েছে। নেটিজেনরা কিশোরীর নির্যাতনের ঘটনায় কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে একজন কিশোরীর ওপর এ ধরনের নির্মমতা চালানো যায়।

শেষ কথা

এই ঘটনা সমাজের নৃশংসতা ও নারী নির্যাতনের চিত্রকে আরও একবার উন্মোচিত করেছে। কিশোরীটির নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি, সমাজে এ ধরনের ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য সচেতনতা ও কঠোর আইন প্রয়োগের দাবি জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

#কিশোরীনির্যাতন #কুড়িগ্রাম #রাজারহাট #নারীঅধিকার #সামাজিকন্যায়বিচার

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ১১:২৯:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
১৯

১৫ বছরের কিশোরীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন: বাবার বিরুদ্ধে চুরির অপবাদের প্রতিবাদ করায় নির্মমতা

আপডেট: ১১:২৯:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ছয় ঘণ্টা গাছের সঙ্গে বাঁধা রেখে মারধর, পুলিশ উদ্ধার করে কিশোরীকে! ছবি : সংগৃহিত 

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় এক মর্মান্তিক ঘটনায় ১৫ বছরের এক কিশোরীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। বাবার বিরুদ্ধে চুরির অপবাদ দেওয়ায় সে প্রতিবাদ করলে এই নির্মমতা চালানো হয়। টানা ছয় ঘণ্টা গাছে বাঁধা রেখে কিশোরীটিকে মারধর করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের একটি গ্রামে।

ঘটনার পটভূমি

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী কিশোরীটি উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার ছোট বোন (৯) হৃদরোগে ভুগছিল। চিকিৎসার খরচের জন্য কিশোরীর দাদি তার বাবাকে একটি গরু দেন। পরে কিশোরীর দূরসম্পর্কের দাদা আবদুল কাদের (সাবেক ইউপি সদস্য) ওই গরু চুরির অভিযোগ এনে কিশোরীর বাবাকে হুমকি দেন।

কিশোরী তার বাবার বিরুদ্ধে এই অপবাদের প্রতিবাদ করলে আবদুল কাদেরের উঠানে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত টানা ছয় ঘণ্টা গাছে বাঁধা রেখে কিশোরীটিকে মারধর করা হয়। তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করা হয় এবং হাঁটু, গলা ও পিঠে জখম করা হয়।

পুলিশের হস্তক্ষেপ

ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। বেলা তিনটার দিকে পুলিশ কিশোরীটিকে উদ্ধার করে। তবে অভিযুক্ত আবদুল কাদের ও তার সহযোগীরা পুলিশের আগমনের খবর পেয়ে পালিয়ে যান।

কিশোরীটিকে উদ্ধার করে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। তার মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে মায়া বেগম নামের এক নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। কিশোরী লিখিত অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় ইউপি সদস্যের বক্তব্য

ঘটনাস্থলের স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ বলেন, “কিশোরীর বোনের চিকিৎসার জন্য তার বাবা জোর করে তার মায়ের একটি গরু নিয়ে বাসায় বেঁধে রাখেন। পরে গরুটি ফিরিয়ে আনতে গেলে কিশোরী তার দাদিকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এতে দাদি অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকার নারীরা তাকে বেঁধে রাখেন।”

তবে কিশোরী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারা বলছেন, গরুটি দাদি স্বেচ্ছায় দিয়েছিলেন এবং চুরির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

সামাজিক মাধ্যমের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়েছে। নেটিজেনরা কিশোরীর নির্যাতনের ঘটনায় কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে একজন কিশোরীর ওপর এ ধরনের নির্মমতা চালানো যায়।

শেষ কথা

এই ঘটনা সমাজের নৃশংসতা ও নারী নির্যাতনের চিত্রকে আরও একবার উন্মোচিত করেছে। কিশোরীটির নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি, সমাজে এ ধরনের ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য সচেতনতা ও কঠোর আইন প্রয়োগের দাবি জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

#কিশোরীনির্যাতন #কুড়িগ্রাম #রাজারহাট #নারীঅধিকার #সামাজিকন্যায়বিচার