জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেনকে হত্যায় প্রধান সন্দেহভাজন মাহিরকে থানায় দিলেন তাঁর মা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেনকে হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে রোববার গভীর রাতে তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা
আজ সন্ধ্যায় মাহিরের খালু ইমরান শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুনের ঘটনায় মাহিরের সম্পৃক্ততা পেয়ে গতকাল রাত তিনটার দিকে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। এই খবর পেয়ে মাহিরের মা রেখা আক্তার আজ (সোমবার) সকাল সাতটার দিকে মাহিরকে নিয়ে বংশাল থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। সম্পৃক্ততা না পেয়ে সকাল ছয়টার দিকে পুলিশ আমাকে ছেড়ে দেয়।’
ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা মো. জোবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন মাহির রহমানকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন তাঁর মা রেখা আক্তার। আজ সোমবার সকালে তিনি নিজে বংশাল থানায় গিয়ে ছেলেকে পুলিশের কাছে দিয়ে আসেন বলে তাঁদের একজন স্বজন জানিয়েছেন।
মাহিরকে তাঁর মা থানায় সোপর্দ করেছেন, এই তথ্য স্বীকার করেনি পুলিশ। তবে এ হত্যাকাণ্ডে মাহিরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আমিনুল কবীর তরফদার প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমরা এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছি। শিগগিরই তা জানানো হবে।’
গতকাল রাতে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার একটি বাড়ির সিঁড়ি থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতা মো. জোবায়েদ হোসেনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়
গতকাল রাতে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার একটি বাড়ির সিঁড়ি থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতা মো. জোবায়েদ হোসেনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়ফাইল ছবি
গতকাল রোববার রাতে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার একটি ভবনের সিঁড়ি থেকে জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। জোবায়েদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
সহপাঠী ও পুলিশের তথ্যমতে, ভবনটির একটি বাসায় উচ্চমাধ্যমিকের এক ছাত্রীকে পড়াতেন জোবায়েদ। তাঁর লাশ উদ্ধারের পর ওই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বংশাল থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ওই ছাত্রীর পাশাপাশি পুলিশের একাধিক টিম রাতে মাহিরের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অভিযান চালায়। পরবর্তী সময়ে মাহিরের মা তাঁকে থানায় দেবে বলে জানান। সেই কথা অনুযায়ী সকালবেলা তিনি ছেলেকে থানায় সোপর্দ করেন।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রেমের কারণেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। জুবায়েদকে হত্যার সময় ঘটনাস্থলে তিনজন ছিলেন। তবে ছুরিকাঘাত করেন মাহির। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে খুনের ১৮ ঘণ্টা পরও মামলা হয়নি। জোবায়েদের পরিবার বলছে, তারা গতকাল দিবাগত রাত ১২টা থেকে মামলা করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু মামলা করতে পারেনি।
জোবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ছাত্রীসহ ছয়জনের নামে মামলা দিতে চেয়েছি। কিন্তু বংশাল থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) এতজনের নামে মামলা না দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এতজনের নামে মামলা দিলে হালকা হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আমিনুল কবীর বলেন, জোবায়েদের পরিবার দাফনের কাজে ব্যস্ত রয়েছে। দাফন কার্যক্রম শেষ করে রাতেই মামলা করবে।