০১:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

বেগমগঞ্জের শরিফ পুরে বালিকা মাদ্রাসায় ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি

ডেস্ক নিউজ

বেগমগঞ্জের শরিফ পুরে বালিকা মাদ্রাসায় ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি, ৪ পরীক্ষাথী ছাত্রীর কেউ পাস করেনি।
এম জি বাবর
চলতি বছর দাখিল পরীক্ষায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ১৫ শিক্ষকের ৪ ছাত্রীর কেউ পাস না করা মাদরাসাটি পরিদর্শনে গিয়ে ভয়াবহ অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান। সোমবার (০১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শরীফপুর ইউনিয়নের দারুল ফালাহ দাখিল বালিকা মাদরাসা (মাদ্রাসা কোড-১৯৬০৪) পরিদর্শনে গিয়ে এ অনিয়ম দেখতে পান। প্রতিষ্ঠানটিতে ১৫ জন এমপিও ভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছে। গত বছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সবাই ফেল করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটি মুরগি/গরুর খামারে ক্লাস চলছে। প্রতি শ্রেণির জন্য বরাদ্দ ১টি বা সর্বোচ্চ ২টি বেঞ্চ। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কয়েকমাস আগে উপজেলায় দেখা করতে এলে তাদের কতজন শিক্ষার্থী রয়েছে তার তথ্য দিতে বললে কেউ বলতে পারেনি। পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার পর তাদের কোন ক্লাসে কতজন শিক্ষার্থী রয়েছে তার তালিকা জমা দিতে বললে তারা প্রায় ২৪০ জনের তালিকা দেয়। সরেজমিনে গিয়ে তৃতীয় শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত মাত্র ২৭ জন শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের শিক্ষকরা মিথ্যা বলা শিখিয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সকলে অবলিলায় মিথ্যা বলে। তাদের প্রতিটি কথাই মিথ্যা। এই প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তির সময় মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিল। টাকার বিনিময়ে যারা প্রতিষ্ঠাকালীন ছিল তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের নিয়োগ দেয়। নিজস্ব জায়গা নিয়েও সমস্যা আছে। এলাকার মানুষের সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ। একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মিথ্যার ওপর ভর করে কখনো চলা উচিত নয়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কারণে অন্যদের বদনাম হয়। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী দায়ী সকলের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান ও শামসুদ্দোহা বলেন, এই মাদরাসায় শিক্ষক আছেন, কিন্তু শিক্ষা নেই। এমন মাদসার কী প্রয়োজন ? এটা আমাদের এলাকার জন্য লজ্জার ব্যাপার। মাদরাসার এমন খারাপ ফলাফলের জন্য দায়ী প্রধান মাওলানা ইমাম হোসাইন। তিনি দুর্নীতির রাজা। তার মধ্যে শুধুই অনিয়ম। তিনি মাদরাসার দাতা পরিবারের নামে মামলা করেছেন। দুধের শিশুও মামলা থেকে রেহাই পায় নাই। তিনি শিক্ষার্থী দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানাই।
ওই মাদ্রাসার শিক্ষক হাছিনা আক্তার ও মহিন উদ্দিন বলেন, বিগত ২০২০ইং সনে এমপিও ভুক্ত হলেও শিক্ষক শিক্ষিকাকে উপযুক্ত বেতনাদী ও অন্যান্য সুযোগ সুুবিধা না দিয়ে মাদ্রাসা সুপার বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্নসাত করেছে। বর্তমানে ৭ জন শিক্ষক থেকে ২৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন আমাদের কাউকে মাদ্রাসায় যেতে দিছে না। এতে আমাদের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। তারা আরো জানান ওই মাদ্রাসার সুপারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলোও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
অভিযোগ অস্বীকার করে মাদরাসার সুপার মাওলানা ইমাম হোসাইন বলেন, আমরা ভাড়া বাড়িতে ক্লাস নিচ্ছি। ইউএনও স্যারের সব অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। তিনি সমাধান না করে আমাদের দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান বলেন, মাদরাসাটি পরিদর্শন শেষে ইউএনও গঠনাস্থলেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কিছু অসাধু শিক্ষক কিভাবে একটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করতে পারে তা মাদরাসার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। যা তদন্ত হচ্ছে। আজকে মাদরাসায় গিয়ে অবাক হয়েছি। গোয়াল ঘরের একটা রুমে ৬ শ্রেণির শিক্ষার্থীর পাঠদান করাচ্ছেন। তারা নিজেদের রোল নম্বর পর্যন্ত বলতে পারে না। তিনি ২৪০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা জানালেও আমরা পেয়েছি মাত্র ২৭ জন।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০২:৪৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
৪২

বেগমগঞ্জের শরিফ পুরে বালিকা মাদ্রাসায় ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি

আপডেট: ০২:৪৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বেগমগঞ্জের শরিফ পুরে বালিকা মাদ্রাসায় ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি, ৪ পরীক্ষাথী ছাত্রীর কেউ পাস করেনি।
এম জি বাবর
চলতি বছর দাখিল পরীক্ষায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ১৫ শিক্ষকের ৪ ছাত্রীর কেউ পাস না করা মাদরাসাটি পরিদর্শনে গিয়ে ভয়াবহ অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান। সোমবার (০১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শরীফপুর ইউনিয়নের দারুল ফালাহ দাখিল বালিকা মাদরাসা (মাদ্রাসা কোড-১৯৬০৪) পরিদর্শনে গিয়ে এ অনিয়ম দেখতে পান। প্রতিষ্ঠানটিতে ১৫ জন এমপিও ভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছে। গত বছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সবাই ফেল করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটি মুরগি/গরুর খামারে ক্লাস চলছে। প্রতি শ্রেণির জন্য বরাদ্দ ১টি বা সর্বোচ্চ ২টি বেঞ্চ। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কয়েকমাস আগে উপজেলায় দেখা করতে এলে তাদের কতজন শিক্ষার্থী রয়েছে তার তথ্য দিতে বললে কেউ বলতে পারেনি। পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার পর তাদের কোন ক্লাসে কতজন শিক্ষার্থী রয়েছে তার তালিকা জমা দিতে বললে তারা প্রায় ২৪০ জনের তালিকা দেয়। সরেজমিনে গিয়ে তৃতীয় শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত মাত্র ২৭ জন শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের শিক্ষকরা মিথ্যা বলা শিখিয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সকলে অবলিলায় মিথ্যা বলে। তাদের প্রতিটি কথাই মিথ্যা। এই প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তির সময় মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিল। টাকার বিনিময়ে যারা প্রতিষ্ঠাকালীন ছিল তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের নিয়োগ দেয়। নিজস্ব জায়গা নিয়েও সমস্যা আছে। এলাকার মানুষের সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ। একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মিথ্যার ওপর ভর করে কখনো চলা উচিত নয়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কারণে অন্যদের বদনাম হয়। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী দায়ী সকলের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান ও শামসুদ্দোহা বলেন, এই মাদরাসায় শিক্ষক আছেন, কিন্তু শিক্ষা নেই। এমন মাদসার কী প্রয়োজন ? এটা আমাদের এলাকার জন্য লজ্জার ব্যাপার। মাদরাসার এমন খারাপ ফলাফলের জন্য দায়ী প্রধান মাওলানা ইমাম হোসাইন। তিনি দুর্নীতির রাজা। তার মধ্যে শুধুই অনিয়ম। তিনি মাদরাসার দাতা পরিবারের নামে মামলা করেছেন। দুধের শিশুও মামলা থেকে রেহাই পায় নাই। তিনি শিক্ষার্থী দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানাই।
ওই মাদ্রাসার শিক্ষক হাছিনা আক্তার ও মহিন উদ্দিন বলেন, বিগত ২০২০ইং সনে এমপিও ভুক্ত হলেও শিক্ষক শিক্ষিকাকে উপযুক্ত বেতনাদী ও অন্যান্য সুযোগ সুুবিধা না দিয়ে মাদ্রাসা সুপার বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্নসাত করেছে। বর্তমানে ৭ জন শিক্ষক থেকে ২৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন আমাদের কাউকে মাদ্রাসায় যেতে দিছে না। এতে আমাদের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। তারা আরো জানান ওই মাদ্রাসার সুপারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলোও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
অভিযোগ অস্বীকার করে মাদরাসার সুপার মাওলানা ইমাম হোসাইন বলেন, আমরা ভাড়া বাড়িতে ক্লাস নিচ্ছি। ইউএনও স্যারের সব অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। তিনি সমাধান না করে আমাদের দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান বলেন, মাদরাসাটি পরিদর্শন শেষে ইউএনও গঠনাস্থলেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কিছু অসাধু শিক্ষক কিভাবে একটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করতে পারে তা মাদরাসার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। যা তদন্ত হচ্ছে। আজকে মাদরাসায় গিয়ে অবাক হয়েছি। গোয়াল ঘরের একটা রুমে ৬ শ্রেণির শিক্ষার্থীর পাঠদান করাচ্ছেন। তারা নিজেদের রোল নম্বর পর্যন্ত বলতে পারে না। তিনি ২৪০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা জানালেও আমরা পেয়েছি মাত্র ২৭ জন।