০১:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ০২ জুন ২০২৫

নব্বইয়ের ‘তারকা সন্ত্রাসী’ সুব্রত বাইন আজও কেন আতঙ্কের নাম?

ডেস্ক নিউজ

সুব্রত বাইন: ঢাকার অপরাধজগতের এক জীবন্ত কিংবদন্তি


🔥 উত্থান: মগবাজারের রেস্টুরেন্ট কর্মচারী থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী

১৯৬৭ সালে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে জন্ম নেওয়া সুব্রত বাইন, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার জোবারপাড় গ্রামের সন্তান। শিক্ষা জীবন শুরু করেন বরিশালের অক্সফোর্ড মিশন স্কুলে, পরে ঢাকায় শেরেবাংলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় এক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে অপরাধজগতে পা রাখেন। মগবাজারের ‘চাংপাই’ রেস্টুরেন্টে কর্মরত থাকা অবস্থায় ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। বিশাল সেন্টার হয়ে ওঠে তাঁর অপরাধ কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু, যার ফলে তিনি ‘বিশালের সুব্রত’ নামে পরিচিতি লাভ করেনProthomalo


🩸 অপরাধজগতের বিস্তার: খুন, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র চোরাচালান

নব্বইয়ের দশকে সুব্রত বাইন ঢাকার অপরাধজগতে এক ভয়ংকর নাম হয়ে ওঠেন। মগবাজার, রমনা, কারওয়ান বাজার, মধুবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেন। দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, জমি ও ফ্ল্যাট দখল, চাঁদাবাজি, খুনসহ অন্তত ৩০টি হত্যা মামলায় তাঁর নাম জড়িয়ে আছে২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হয়, যা এখনো সক্রিয়WikipediaProthomalo


🌍 আন্তর্জাতিক পালিয়ে বেড়ানো: ভারত, নেপাল ও চীন

২০০১ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে সুব্রত বাইন ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি ‘ফতেহ আলী’ নামে পরিচিতি লাভ করেন এবং ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৮ সালে কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে, কিন্তু ২০০৯ সালে জামিনে মুক্তি পান। পরবর্তীতে নেপালে পালিয়ে যান এবং সেখানেও গ্রেপ্তার হন। ২০১২ সালে নেপালের ঝুমকা কারাগার থেকে ৭৭ ফুট দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ১০ জন সহ বন্দি পালিয়ে যান


🧨 ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় মিথ্যা জড়িতকরণ

২০০৪ সালের ঢাকার গ্রেনেড হামলার পর সুব্রত বাইনের নেতৃত্বাধীন ‘সেভেন স্টার গ্রুপ’কে মিথ্যাভাবে জড়িত করা হয়। জজ মিয়া নামে একজনকে নির্যাতনের মাধ্যমে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়, যা পরে প্রমাণিত হয় যে হামলার সঙ্গে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি) জড়িত ছিল


🚨 সর্বশেষ গ্রেপ্তার: ২০২৫ সালে কুষ্টিয়ায়

দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ২০২৫ সালের ২৭ মে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে কুষ্টিয়ার কালিশংকরপুর এলাকা থেকে সুব্রত বাইন ও তাঁর সহযোগী মোল্লা মাসুদ গ্রেপ্তার হন। তাঁর বিরুদ্ধে হাতিরঝিল ও গুলশান এলাকায় তিনটি খুনের অভিযোগ রয়েছে। ২১ এপ্রিল ২০২৫ সালে হাতিরঝিলে যুবদল কর্মী আরিফ সরদার হত্যাকাণ্ডে তাঁর বাহিনীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়Wikipedia


🧩 রাজনৈতিক সম্পর্ক ও প্রভাব

সুব্রত বাইনের অপরাধজগতের বিস্তারে রাজনৈতিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির হয়ে কাজ করে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি তাঁকে ‘তারকা সন্ত্রাসী’র তকমা দেয়


❓ বারবার ফিরে আসার রহস্য

সুব্রত বাইনের বারবার গ্রেপ্তার হওয়া সত্ত্বেও অপরাধজগতে ফিরে আসার পেছনে রাজনৈতিক আশ্রয়, দুর্বল বিচারব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সীমাবদ্ধতা দায়ী। তাঁর মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সমাজে অপরাধের বিস্তার রোধ করা কঠিন হবেProthomalo


সুব্রত বাইন শুধু একজন অপরাধী নন; তিনি বাংলাদেশের অপরাধজগতের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি, যার উত্থান ও পতনের গল্প আমাদের সমাজের আইন-শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার জটিলতা তুলে ধরে।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০২:৫৪:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

নব্বইয়ের ‘তারকা সন্ত্রাসী’ সুব্রত বাইন আজও কেন আতঙ্কের নাম?

আপডেট: ০২:৫৪:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

সুব্রত বাইন: ঢাকার অপরাধজগতের এক জীবন্ত কিংবদন্তি


🔥 উত্থান: মগবাজারের রেস্টুরেন্ট কর্মচারী থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী

১৯৬৭ সালে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে জন্ম নেওয়া সুব্রত বাইন, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার জোবারপাড় গ্রামের সন্তান। শিক্ষা জীবন শুরু করেন বরিশালের অক্সফোর্ড মিশন স্কুলে, পরে ঢাকায় শেরেবাংলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় এক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে অপরাধজগতে পা রাখেন। মগবাজারের ‘চাংপাই’ রেস্টুরেন্টে কর্মরত থাকা অবস্থায় ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। বিশাল সেন্টার হয়ে ওঠে তাঁর অপরাধ কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু, যার ফলে তিনি ‘বিশালের সুব্রত’ নামে পরিচিতি লাভ করেনProthomalo


🩸 অপরাধজগতের বিস্তার: খুন, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র চোরাচালান

নব্বইয়ের দশকে সুব্রত বাইন ঢাকার অপরাধজগতে এক ভয়ংকর নাম হয়ে ওঠেন। মগবাজার, রমনা, কারওয়ান বাজার, মধুবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেন। দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, জমি ও ফ্ল্যাট দখল, চাঁদাবাজি, খুনসহ অন্তত ৩০টি হত্যা মামলায় তাঁর নাম জড়িয়ে আছে২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হয়, যা এখনো সক্রিয়WikipediaProthomalo


🌍 আন্তর্জাতিক পালিয়ে বেড়ানো: ভারত, নেপাল ও চীন

২০০১ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে সুব্রত বাইন ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি ‘ফতেহ আলী’ নামে পরিচিতি লাভ করেন এবং ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৮ সালে কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে, কিন্তু ২০০৯ সালে জামিনে মুক্তি পান। পরবর্তীতে নেপালে পালিয়ে যান এবং সেখানেও গ্রেপ্তার হন। ২০১২ সালে নেপালের ঝুমকা কারাগার থেকে ৭৭ ফুট দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ১০ জন সহ বন্দি পালিয়ে যান


🧨 ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় মিথ্যা জড়িতকরণ

২০০৪ সালের ঢাকার গ্রেনেড হামলার পর সুব্রত বাইনের নেতৃত্বাধীন ‘সেভেন স্টার গ্রুপ’কে মিথ্যাভাবে জড়িত করা হয়। জজ মিয়া নামে একজনকে নির্যাতনের মাধ্যমে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়, যা পরে প্রমাণিত হয় যে হামলার সঙ্গে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি) জড়িত ছিল


🚨 সর্বশেষ গ্রেপ্তার: ২০২৫ সালে কুষ্টিয়ায়

দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ২০২৫ সালের ২৭ মে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে কুষ্টিয়ার কালিশংকরপুর এলাকা থেকে সুব্রত বাইন ও তাঁর সহযোগী মোল্লা মাসুদ গ্রেপ্তার হন। তাঁর বিরুদ্ধে হাতিরঝিল ও গুলশান এলাকায় তিনটি খুনের অভিযোগ রয়েছে। ২১ এপ্রিল ২০২৫ সালে হাতিরঝিলে যুবদল কর্মী আরিফ সরদার হত্যাকাণ্ডে তাঁর বাহিনীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়Wikipedia


🧩 রাজনৈতিক সম্পর্ক ও প্রভাব

সুব্রত বাইনের অপরাধজগতের বিস্তারে রাজনৈতিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির হয়ে কাজ করে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি তাঁকে ‘তারকা সন্ত্রাসী’র তকমা দেয়


❓ বারবার ফিরে আসার রহস্য

সুব্রত বাইনের বারবার গ্রেপ্তার হওয়া সত্ত্বেও অপরাধজগতে ফিরে আসার পেছনে রাজনৈতিক আশ্রয়, দুর্বল বিচারব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সীমাবদ্ধতা দায়ী। তাঁর মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সমাজে অপরাধের বিস্তার রোধ করা কঠিন হবেProthomalo


সুব্রত বাইন শুধু একজন অপরাধী নন; তিনি বাংলাদেশের অপরাধজগতের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি, যার উত্থান ও পতনের গল্প আমাদের সমাজের আইন-শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার জটিলতা তুলে ধরে।