
ইয়ানূর রহমান : বাংলাদেশে হিন্দু যুবক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে বেনাপোল সীমান্তের ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্তে বিক্ষোভ মিছিল ও কুশপুত্তলিকা দাহ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিজেপি ও হিন্দু সনাতনীরা।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুরের দিকে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে ভেসে আসে- “আমরা কাঁটাতার মানব না”, “বন্দে মাতারাম”, “হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই”, “বিশ্বের সব হিন্দু এক হও”, “জিহাদীরা হুঁশিয়ার, রাজাকার সাবধান”-এমন স্লোগান। এসব স্লোগান বাংলাদেশ সীমান্তের বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকাতেও স্পষ্টভাবে শোনা যায়। এমন স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা সীমান্ত এলাকা।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হিন্দু সনাতনীদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নেন বিজেপির বিধায়ক অসীম সরকারসহ দলের একাধিক নেতা। উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ উত্তর বিজেপি বিধায়ক অশোক কৃত্তনীয়াও। পেট্রাপোল সীমান্ত এলাকায় খোল-করতাল হাতে বিক্ষোভকারীরা মিছিল করেন। ‘হিন্দু হিন্দু ভাইভাই’, ‘বিশ্বের সব হিন্দু এক হও’, ‘আমরা কাঁটাতার মানব না’- বক্তারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং দীপু দাস হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বিক্ষোভকারী জ্যোৎস্না সরকার বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দু যুবককে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাতে আমাদের এই মিছিল। হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বন্ধ না হলে প্রতিবাদ আরও জোরালো হবে। আমরা কাঁটাতার মানব না।”
আরেক আন্দোলনকারী বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ হোক। বিশ্বের সব হিন্দু এক হোক। আরও একজন হিন্দুর ওপর অত্যাচার হলে আমরা কোনো বাধা মানব না। এই আন্দোলনের ঢেউ বাংলাদেশে আছড়ে পড়বে।
আরেক বক্তা বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দু হত্যা এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যেকারণে প্রতিদিনই বাড়ছে প্রতিবাদের আঁচ, যার রেশ ছড়িয়ে পড়ছে জেলায় জেলায়।” একই ইস্যুতে ফুলবাড়ির ইন্দো-বাংলা সীমান্ত, মালদহের মনোহরপুর-মুচিয়া সীমান্ত এবং ঘোজাডাঙ্গা বন্দরের সামনেও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
প্রসঙ্গত, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় পোশাক কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে (২৮) ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে গণপিটুনি দেওয়া হয়। পরে তাঁর মরদেহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে নিয়ে গিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নিহত দীপু দাস তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়া কান্দা গ্রামের রবি চন্দ্র দাসের ছেলে এবং ‘পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড’ কারখানায় দুই বছর ধরে কর্মরত ছিলেন।
বক্তারা অভিযোগ করেন, এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র আবারও সামনে এসেছে। একইসঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি সংবাদমাধ্যমে হামলা ও ছায়ানট সাংস্কৃতিক উদ্যানে ভাঙচুরের ঘটনাও উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন তারা। এমতাবস্থায় মৌলবাদীদের দাপাদাপির বিরুদ্ধে ভারতের মাটিতেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে এবং অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিক্ষোভকারীরা।#
✍️ মন্তব্য লিখুন