০৫:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

প্রেমঘটিত কারণেই জবি ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ খুন

নিউজ ডেস্ক

পুরান ঢাকার আরমানিটোলার ১৫, নূরবক্স লেনের ‘রৌশান ভিলা’ নামের একটি বাসায় রোববার বিকেলে ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে খুন হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসেন। এই হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ বলছে, ওই ছাত্রীর প্রেমঘটিত কারণেই খুন হয়েছেন জোবায়েদ।

জানা গেছে, রোববার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে ওই বাসার তৃতীয় তলায় জোবায়েদকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। বাসার নিচতলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত সিঁড়িতে রক্তের দাগ ছিল এবং তৃতীয় তলার সিঁড়িতে পড়ে থাকতে দেখা যায় তার মরদেহ। এরপর রাত ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মিডফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাত ১১টার দিকে ওই ছাত্রীকে নিজ বাসা থেকে পুলিশ প্রটোকলে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চলে জিজ্ঞাসাবাদ।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ছাত্রী জানিয়েছেন, তিনি ও তার বয়ফ্রেন্ড মাহির রহমানের প্রেমঘটিত দ্বন্দ্বের জেরে খুন হয়েছেন জবি ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসেন। তবে জোবায়েদের খুনের ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন তিনি।

সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ওই ছাত্রীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর সাংবাদিকদের সামনে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, ওই ছাত্রীর সঙ্গে মাহির রহমানের ৯ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মাহির বুরহান উদ্দিন কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং মেয়েটি ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। তারা ছোটবেলা থেকেই প্রতিবেশী এবং একে অপরকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন।

রফিকুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। কিছুদিন আগে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর তিনি মাহিরকে জানান, এখন জোবায়েদকে পছন্দ করেন তিনি। এটা জানার পর রাগে-ক্ষোভে মাহির রহমান তার বন্ধু নাফিসকে সঙ্গে নিয়ে জোবায়েদকে খুন করেন।

ওসি বলেন, ওই ছাত্রী জোবায়েদকে পছন্দ করলেও, জোবায়েদের সঙ্গে তার কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। তাদের মধ্যে এমন কোনো ঘনিষ্ঠ বার্তা বা যোগাযোগও ছিল বলে কিছু পাওয়া যায়নি। পুরো ঘটনাটি মূলত মাহিরের সঙ্গে ওই ছাত্রীর রাগের কারণেই ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ওসির তথ্যমতে, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ওই ছাত্রীর সঙ্গে জোবায়েদের বন্ধু সৈকতের পরিচয় হয় ফেসবুকে। তবে তাদের মধ্যে অন্য কোনো সম্পর্ক ছিল না। জোবায়েদের মৃত্যুর খবর সৈকতের কাছ থেকেই জানতে পারেন তিনি।

ওসি আরও জানান, ওই ছাত্রীর জিজ্ঞাসাবাদের সময় কোনো হতাশা বা নার্ভাসনেস দেখা যায়নি। তাকে পুরো সময় শান্ত ও চিন্তামুক্ত দেখা গেছে। বিষয়টি আমরা আরও গভীরভাবে তদন্ত করছি। পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে।

নিহত জোবায়েদ হোসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি এবং শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন তিনি।

এদিকে, জোবায়েদ হত্যার দ্রুত বিচার ও জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে রোববার রাতে শিক্ষার্থীরা বংশাল থানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখেন।

পুলিশ জানিয়েছে, মূল অভিযুক্ত মাহির রহমান ও তার বন্ধু নাফিসকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০১:৪৫:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
১৭

প্রেমঘটিত কারণেই জবি ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ খুন

আপডেট: ০১:৪৫:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

পুরান ঢাকার আরমানিটোলার ১৫, নূরবক্স লেনের ‘রৌশান ভিলা’ নামের একটি বাসায় রোববার বিকেলে ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে খুন হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসেন। এই হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ বলছে, ওই ছাত্রীর প্রেমঘটিত কারণেই খুন হয়েছেন জোবায়েদ।

জানা গেছে, রোববার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে ওই বাসার তৃতীয় তলায় জোবায়েদকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। বাসার নিচতলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত সিঁড়িতে রক্তের দাগ ছিল এবং তৃতীয় তলার সিঁড়িতে পড়ে থাকতে দেখা যায় তার মরদেহ। এরপর রাত ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মিডফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাত ১১টার দিকে ওই ছাত্রীকে নিজ বাসা থেকে পুলিশ প্রটোকলে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চলে জিজ্ঞাসাবাদ।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ছাত্রী জানিয়েছেন, তিনি ও তার বয়ফ্রেন্ড মাহির রহমানের প্রেমঘটিত দ্বন্দ্বের জেরে খুন হয়েছেন জবি ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসেন। তবে জোবায়েদের খুনের ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন তিনি।

সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ওই ছাত্রীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর সাংবাদিকদের সামনে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, ওই ছাত্রীর সঙ্গে মাহির রহমানের ৯ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মাহির বুরহান উদ্দিন কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং মেয়েটি ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। তারা ছোটবেলা থেকেই প্রতিবেশী এবং একে অপরকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন।

রফিকুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। কিছুদিন আগে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর তিনি মাহিরকে জানান, এখন জোবায়েদকে পছন্দ করেন তিনি। এটা জানার পর রাগে-ক্ষোভে মাহির রহমান তার বন্ধু নাফিসকে সঙ্গে নিয়ে জোবায়েদকে খুন করেন।

ওসি বলেন, ওই ছাত্রী জোবায়েদকে পছন্দ করলেও, জোবায়েদের সঙ্গে তার কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। তাদের মধ্যে এমন কোনো ঘনিষ্ঠ বার্তা বা যোগাযোগও ছিল বলে কিছু পাওয়া যায়নি। পুরো ঘটনাটি মূলত মাহিরের সঙ্গে ওই ছাত্রীর রাগের কারণেই ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ওসির তথ্যমতে, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ওই ছাত্রীর সঙ্গে জোবায়েদের বন্ধু সৈকতের পরিচয় হয় ফেসবুকে। তবে তাদের মধ্যে অন্য কোনো সম্পর্ক ছিল না। জোবায়েদের মৃত্যুর খবর সৈকতের কাছ থেকেই জানতে পারেন তিনি।

ওসি আরও জানান, ওই ছাত্রীর জিজ্ঞাসাবাদের সময় কোনো হতাশা বা নার্ভাসনেস দেখা যায়নি। তাকে পুরো সময় শান্ত ও চিন্তামুক্ত দেখা গেছে। বিষয়টি আমরা আরও গভীরভাবে তদন্ত করছি। পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে।

নিহত জোবায়েদ হোসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি এবং শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন তিনি।

এদিকে, জোবায়েদ হত্যার দ্রুত বিচার ও জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে রোববার রাতে শিক্ষার্থীরা বংশাল থানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখেন।

পুলিশ জানিয়েছে, মূল অভিযুক্ত মাহির রহমান ও তার বন্ধু নাফিসকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।