ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি নবায়নে তোড়জোড় শুরু ভারতীয় কোম্পানির
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি)। এর মধ্যে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের মার্চে। বিপিডিবির সঙ্গে চুক্তি নবায়নের জন্য এরই মধ্যে তোড়জোড় শুরু করেছে ভারতীয় কোম্পানি বিদ্যুৎ ভ্যাপর নিগম লিমিটেড (এনভিভিএন)।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এনভিভিএন ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নেয়া বিদ্যুতের ক্রয় চুক্তি নবায়নে কাজ শুরু করেছে। কোম্পানির কর্মকর্তারা ১৮ অক্টোবর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ভারতের ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ত্রিপুরা স্টেট ইলেকট্রিসিটি করপোরেশন লিমিটেডের (টিএসইসিএল) সঙ্গে বিপিডিবির ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি রয়েছে। মূলত টিএসইসিএল এ বিদ্যুৎ এনভিভিএনের পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশকে সরবরাহ করছে। আগামী বছরের মার্চে এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এ হিসেবে চুক্তির মেয়াদ রয়েছে পাঁচ মাসের বেশি কিছু সময়।
brac epl single inner regular
এনভিভিএনের কর্মকর্তারা গত বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে টিএসইসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ বোসের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা বিপিডিবির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে প্রস্তুত। টিএসইসিএল বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে, যা নভেম্বর থেকে ১০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হতে পারে।’
টিএসইসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, ‘এনভিভিএন বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের (বিপিডিবি) সঙ্গে আলোচনা করবে। যদি তারা একমত হয় তাহলে আমরা প্রতিবেশী দেশটিতে (বাংলাদেশ) বিদ্যুৎ সরবরাহ চালিয়ে যাব।’
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১০ সালে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর আওতায় ২০১৭ সালের এপ্রিলে বিপিডিবি ও এনভিভিএনের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যার মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে আরেক দফা চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়, যা শেষ হচ্ছে আগামী বছরের মার্চে।
এনভিভিএনের পক্ষ থেকে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে তোড়জোড় শুরু হলেও বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত বিপিডিবি তেমন কিছুই জানে না বলে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন দুজন কর্মকর্তা। তারা জানান, এ বিষয়ে এনভিভিএন বা টিএসইসিএলের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চিঠি তারা পাননি। তবে চিঠি পেলে বিপিডিবি বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিডিবির শীর্ষ এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এনভিভিএনের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি নবায়ন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আগে বিপিডিবি বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা সভা করবে, তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তাছাড়া চুক্তি নবায়নের বিষয়টি নিয়ে এনভিভিএনের পক্ষ থেকেও কোনো চিঠি পাইনি আমরা। যদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নবায়নের পরিকল্পনা করা হয়, তাহলে দাম কমানোর বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হবে।’
তিনি আরও জানান, আগামী জানুয়ারি থেকে রূপপুরের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিপিডিবির। তখন ত্রিপুরা থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা সে বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের ত্রিপুরা থেকে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ আমদানি হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তার হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে বিপিডিবির বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এনভিভিএন ইন্ডিয়া (ত্রিপুরা) ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির আওতায় ৯৭ কোটি ২২ লাখ ৯৫ হাজার কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ আমদানি করেছে। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১০৭ কোটি ৩৮ লাখ কিলোওয়াট-ঘণ্টা।
পিজিসিবির তথ্য থেকে জানা গেছে, ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির আওতায় বিপিডিবি বর্তমানে কোনো কোনো ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯২ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ আমদানি করছে।