০৫:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫

পাঁচ ব্যাংক অকার্যকর, দায়িত্ব নিলো সরকার, বসালো প্রশাসক

নিউজ ডেস্ক

আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত শরিয়াভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক মার্জার বা একীভূত করতে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোকে অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ক‌রে নিয়মিত এমডিরা বাদ পড়েছে। ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব নিয়েছে সরকার এবং পরিচালনার জন্য প্রশাসক নি‌য়োগ দেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

বুধবার (৫ ন‌ভেম্বর) বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

অকার্যকর ঘোষণা করা ব্যাংকগুলো হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, এক্সিম ব্যাংক পিএলসি এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি

সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানান, একীভূতকর‌ণের বিষটি এতো‌দিন কাগ‌জে কল‌মে ছিল আজ আনুষ্ঠা‌নিক যাত্র শু‌রু করলো। বাংলা‌দেশ ব্যাংক ৫‌টি ব্যাংককে চি‌ঠি দিয়ে‌ জা‌নি‌য়ে দেওয়া হ‌য়ে‌ছে যে তারা অকার্যকর। পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দিয়েছে। এখন ব্যাংকগুলো পরিচালনার জন্য প্রত্যেক ব্যাংকের একজন ক‌রে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। প্রশাসকের স‌ঙ্গে সহ‌যোগীও দেওয়া হ‌চ্ছে।

গভর্নর বলেন, পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে সরকারি ব্যাংক হলেও এটি বেসরকারি ব্যাংকের মতই পরিচালিত হবে। ব্যাংকগুলোতে স্বাভাবিক সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে, গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। আগের নামেই ব্যাংকগুলোতে পেমেন্ট, আমদানি রপ্তানির এলসি খোলা যাবে, আমানত ও চেক নিষ্পত্তি হবে এবং রেমিট্যান্স কার্যক্রম আগের মতোই সচল থাকবে।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব সরকার নিলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কাঠামোতে কোনো ধরনের পরিবর্তন হবে না। বিদ্যমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী কর্মকর্তারা বেতন-ভাতা পাবেন।

সরকা‌রি ব্যাংক হ‌লেও এটা চল‌বে বেসরকা‌রি ব্যাংকের মত জানিয়ে গভর্নর বলেন, ব্যাংকগু‌লোতে স্বাভা‌বিক ব্যাংকিং চল‌বে। ব্যাংকগুলোর নামেও রেমিট্যান্স আসবে। আমদানি-রপ্তানির এলসিও খুলতে পারবে। একই সঙ্গে আমানত ও চেক নিষ্পত্তি হবে নিজেদের নামে।

গ্রাহক কবে তুলতে পারবেন আমানত

এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর জানান, অকার্যকর ঘোষণা করা পাঁচ ব্যাংকের আমানকারীরা চলতি নভেম্বর মাস থেকেই আমানতের অর্থ তুলতে পারবে। তবে যেসব আমানতকারীদের আমানতের পরিমাণ ২ লাখ টাকার নিচে তারাই প্রথমে আমানত তুলতে পারবেন। আর যাদের আমানতের পরিমাণ ২ লাখ টাকার উপরে তাদের অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে শিগগিরই একটি নির্দেশনা জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তিনি জানান, পাঁচটি ব্যাংকের মোট ৭৫০টি শাখা ও ৭৫ লাখ আমানতকারী রয়েছে। আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে চায়। ব্যাংকগুলো যেহেতু সরকারের অধীনে যাচ্ছে তাই আমানতকারীদের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ। ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হলেও যাদের প্রয়োজন আছে তারাই শুধু অর্থ উত্তোলন করবেন। অযথা ব্যাংকে টাকা তোলার জন্য ভীড় করবেন না।

কী পাবেন শেয়ারহোল্ডাররা?

অকার্যকর ঘোষণা করা ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের ভবিষ্যৎ নিয়ে পুঁজিবাজারে দেখা দিয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন— একীভূত হওয়ার পর তাদের শেয়ারের মূল্য কীভাবে নির্ধারিত হবে? এ বিষয়ে গভর্নর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, এই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন নেগেটিভ। তাই তাদের শেয়ারের ভ্যালু শূন্য (জিরো) হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কাউকেই কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক যেমন লভ্যাংশ পান, তেমনি ক্ষতির দায়ও নিতে হয়। আমরা এখানে শেয়ারহোল্ডারদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি না, কেবল তাদের শেয়ারমূল্যকে শূন্য ধরা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অন্য দেশে হলে এই অবস্থায় শেয়ারহোল্ডারদের জরিমানা করা হতো। এখন এসব ব্যাংকের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ঋণাত্মক, কিছু ক্ষেত্রে তা ৪২০ টাকা পর্যন্ত নেগেটিভ।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন সরকার পরিবর্তনের পর এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে কি না— জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, এটা দেশের স্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্ত। প্রত্যাশা করছি সরকার বদলালেও জনগণের স্বার্থেই সিদ্ধান্ত বজায় থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রশাসক হিসেবে এক্সিম ব্যাংকে দায়িত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকাতুল আলম, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক সালাহ উদ্দিন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার। আর আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার দেওয়া হবে। একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকে ৭৫ লাখ আমানতকারীর বর্তমান জমা আছে এক লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ রয়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এক লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশ এখন খেলাপি।

গভর্নর জানান, ৫ ইসলামী ব্যাংক মিলেই দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক হবে। নতুন এ সমন্বিত ব্যাংকের পেইড-আপ ক্যাপিটাল হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যা বর্তমানে দেশের যে কোনও ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি।

এর আগে গত ৯ অক্টোবর সরকারি মালিকানাধীন ইসলামি ব্যাংক গঠনের অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। একীভূত করে একটি নতুন সরকারি মালিকানাধীন ইসলামি ব্যাংক গঠন করা হবে। যার নাম হবে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’।

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ধারাবাহিকভাবে খারাপ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, তারল্য সংকট, বিশাল অঙ্কের শ্রেণিকৃত ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি এবং মূলধন ঘাটতি— এসব কারণে ব্যাংকগুলো কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় পৌঁছেছে।

অনেকবার তারল্য সহায়তা দেওয়ার পরও এই ব্যাংকগুলোর অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বরং তাদের শেয়ার মূল্য মারাত্মকভাবে পড়ে গেছে এবং প্রতিটি ব্যাংকের নিট সম্পদ মূল্য বা নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০১:২০:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫
২২

পাঁচ ব্যাংক অকার্যকর, দায়িত্ব নিলো সরকার, বসালো প্রশাসক

আপডেট: ০১:২০:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫

আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত শরিয়াভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক মার্জার বা একীভূত করতে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোকে অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ক‌রে নিয়মিত এমডিরা বাদ পড়েছে। ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব নিয়েছে সরকার এবং পরিচালনার জন্য প্রশাসক নি‌য়োগ দেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

বুধবার (৫ ন‌ভেম্বর) বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

অকার্যকর ঘোষণা করা ব্যাংকগুলো হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, এক্সিম ব্যাংক পিএলসি এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি

সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানান, একীভূতকর‌ণের বিষটি এতো‌দিন কাগ‌জে কল‌মে ছিল আজ আনুষ্ঠা‌নিক যাত্র শু‌রু করলো। বাংলা‌দেশ ব্যাংক ৫‌টি ব্যাংককে চি‌ঠি দিয়ে‌ জা‌নি‌য়ে দেওয়া হ‌য়ে‌ছে যে তারা অকার্যকর। পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দিয়েছে। এখন ব্যাংকগুলো পরিচালনার জন্য প্রত্যেক ব্যাংকের একজন ক‌রে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। প্রশাসকের স‌ঙ্গে সহ‌যোগীও দেওয়া হ‌চ্ছে।

গভর্নর বলেন, পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে সরকারি ব্যাংক হলেও এটি বেসরকারি ব্যাংকের মতই পরিচালিত হবে। ব্যাংকগুলোতে স্বাভাবিক সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে, গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। আগের নামেই ব্যাংকগুলোতে পেমেন্ট, আমদানি রপ্তানির এলসি খোলা যাবে, আমানত ও চেক নিষ্পত্তি হবে এবং রেমিট্যান্স কার্যক্রম আগের মতোই সচল থাকবে।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব সরকার নিলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কাঠামোতে কোনো ধরনের পরিবর্তন হবে না। বিদ্যমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী কর্মকর্তারা বেতন-ভাতা পাবেন।

সরকা‌রি ব্যাংক হ‌লেও এটা চল‌বে বেসরকা‌রি ব্যাংকের মত জানিয়ে গভর্নর বলেন, ব্যাংকগু‌লোতে স্বাভা‌বিক ব্যাংকিং চল‌বে। ব্যাংকগুলোর নামেও রেমিট্যান্স আসবে। আমদানি-রপ্তানির এলসিও খুলতে পারবে। একই সঙ্গে আমানত ও চেক নিষ্পত্তি হবে নিজেদের নামে।

গ্রাহক কবে তুলতে পারবেন আমানত

এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর জানান, অকার্যকর ঘোষণা করা পাঁচ ব্যাংকের আমানকারীরা চলতি নভেম্বর মাস থেকেই আমানতের অর্থ তুলতে পারবে। তবে যেসব আমানতকারীদের আমানতের পরিমাণ ২ লাখ টাকার নিচে তারাই প্রথমে আমানত তুলতে পারবেন। আর যাদের আমানতের পরিমাণ ২ লাখ টাকার উপরে তাদের অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে শিগগিরই একটি নির্দেশনা জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তিনি জানান, পাঁচটি ব্যাংকের মোট ৭৫০টি শাখা ও ৭৫ লাখ আমানতকারী রয়েছে। আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে চায়। ব্যাংকগুলো যেহেতু সরকারের অধীনে যাচ্ছে তাই আমানতকারীদের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ। ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হলেও যাদের প্রয়োজন আছে তারাই শুধু অর্থ উত্তোলন করবেন। অযথা ব্যাংকে টাকা তোলার জন্য ভীড় করবেন না।

কী পাবেন শেয়ারহোল্ডাররা?

অকার্যকর ঘোষণা করা ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের ভবিষ্যৎ নিয়ে পুঁজিবাজারে দেখা দিয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন— একীভূত হওয়ার পর তাদের শেয়ারের মূল্য কীভাবে নির্ধারিত হবে? এ বিষয়ে গভর্নর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, এই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন নেগেটিভ। তাই তাদের শেয়ারের ভ্যালু শূন্য (জিরো) হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কাউকেই কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক যেমন লভ্যাংশ পান, তেমনি ক্ষতির দায়ও নিতে হয়। আমরা এখানে শেয়ারহোল্ডারদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি না, কেবল তাদের শেয়ারমূল্যকে শূন্য ধরা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অন্য দেশে হলে এই অবস্থায় শেয়ারহোল্ডারদের জরিমানা করা হতো। এখন এসব ব্যাংকের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ঋণাত্মক, কিছু ক্ষেত্রে তা ৪২০ টাকা পর্যন্ত নেগেটিভ।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন সরকার পরিবর্তনের পর এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে কি না— জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, এটা দেশের স্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্ত। প্রত্যাশা করছি সরকার বদলালেও জনগণের স্বার্থেই সিদ্ধান্ত বজায় থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রশাসক হিসেবে এক্সিম ব্যাংকে দায়িত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকাতুল আলম, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক সালাহ উদ্দিন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার। আর আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার দেওয়া হবে। একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকে ৭৫ লাখ আমানতকারীর বর্তমান জমা আছে এক লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ রয়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এক লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশ এখন খেলাপি।

গভর্নর জানান, ৫ ইসলামী ব্যাংক মিলেই দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক হবে। নতুন এ সমন্বিত ব্যাংকের পেইড-আপ ক্যাপিটাল হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যা বর্তমানে দেশের যে কোনও ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি।

এর আগে গত ৯ অক্টোবর সরকারি মালিকানাধীন ইসলামি ব্যাংক গঠনের অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। একীভূত করে একটি নতুন সরকারি মালিকানাধীন ইসলামি ব্যাংক গঠন করা হবে। যার নাম হবে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’।

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ধারাবাহিকভাবে খারাপ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, তারল্য সংকট, বিশাল অঙ্কের শ্রেণিকৃত ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি এবং মূলধন ঘাটতি— এসব কারণে ব্যাংকগুলো কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় পৌঁছেছে।

অনেকবার তারল্য সহায়তা দেওয়ার পরও এই ব্যাংকগুলোর অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বরং তাদের শেয়ার মূল্য মারাত্মকভাবে পড়ে গেছে এবং প্রতিটি ব্যাংকের নিট সম্পদ মূল্য বা নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে।