কৃত্রিম সংকটে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০ টাকা বৃদ্ধি, আমদানির অনুমতি আদায়ের ফন্দি
হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীর পেঁয়াজের বাজার। মাত্র তিন-চার দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে এমন অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতিতে ভোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ না বাড়লে দাম আরও বাড়তে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবি, দেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং বর্তমানে আমদানির প্রয়োজন নেই। তারা সতর্ক করে জানিয়েছে—এ মুহূর্তে আমদানির অনুমতি দিলে স্থানীয় কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন।
বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, এটি দামের স্বাভাবিক ওঠানামা নয়; বরং একটি সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। উদ্দেশ্য হলো দাম বাড়িয়ে সরকারকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে বাধ্য করা।
ভোক্তারা বলছেন, প্রতিবছর এই সময় পেঁয়াজের ঘাটতির গল্প তৈরি করে দাম বাড়ানো হয়। কৃষকের ঘরে এখন পেঁয়াজ নেই, কিন্তু মজুতদারদের গুদাম ভরা। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মুনাফা লুটছে। সরকারি সংস্থাগুলোর এখনই বাজারে তদারকি ও নজরদারি বাড়ানো উচিত এবং সারাদেশে পেঁয়াজের প্রকৃত মজুতের পরিমাণ যাচাই করা দরকার।
রাজধানীর খুচরা বিক্রেতা আলম জানান, “আমাদের হাতে কিছুই নেই। পাইকারি বাজারে যে দামে কিনি, সেই অনুযায়ী বিক্রি করি। দাম এত দ্রুত বাড়ছে যে ক্রেতারা কমে গেছে।”
একই কথা বলছেন পাইকাররাও। পাইকারি ব্যবসায়ী জুবায়ের বলেন, “আড়ত থেকেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিক্রি করছি। এখন পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১১০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।”
অন্যদিকে আড়তদারদের মতে, কিছু ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে পেঁয়াজ ধরে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে কিছু পেঁয়াজ নষ্টও হয়েছে, ফলে সরবরাহ কমেছে। এ কারণেই সব স্তরে দামের প্রভাব পড়েছে। তাদের ধারণা, এই অবস্থা কয়েক সপ্তাহ চলতে পারে। তবে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বা আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে এলেই দাম কমে যাবে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখনও ২২ শতাংশ কম। গতকাল বুধবার রাজধানীর মালিবাগ, কারওয়ান বাজার ও আগারগাঁওয়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। কয়েক দিন আগেও দাম ছিল ৮০ টাকার মতো—অর্থাৎ কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
আমদানিকারক ও বড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে দৈনিক পেঁয়াজের চাহিদা ৬ থেকে ৭ হাজার টন। কিন্তু বর্তমান সরবরাহে সেই চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। প্রায় মাসখানেক আগে নতুন মৌসুমের মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ শুরু হয়েছে। এখন চাষির ঘরে পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে আরও দেড়-দুই মাস সময় লাগবে। তাই তারা মনে করছেন, এখন আমদানির বিকল্প নেই।
তবে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দেশে এখনও প্রকৃত সংকট তৈরি হয়নি। বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকলেও একটি মহল পরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছে এবং আমদানির অনুমতি আদায়ের চেষ্টা করছে।
















