০৮:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি: কার্যকর করা কি আদৌ সম্ভব?

ডেস্ক নিউজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান মোটেও সহজ কাজ নয়। যুদ্ধবিরতির জন্য একটি সমঝোতায় পৌঁছানোও অত্যন্ত জটিল। সৌদি আরবের জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পর ইউক্রেন সর্বোচ্চ ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। তবে এই যুদ্ধবিরতি কীভাবে কার্যকর হবে, তা এখনও অস্পষ্ট।

যুদ্ধবিরতির বাস্তবতা: ইতিহাস কি বলে?

রাশিয়ার পূর্ব ইতিহাস অনুযায়ী, তারা বেশ কয়েকবার শান্তিচুক্তি লঙ্ঘন করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের জন্য একটি শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া থাকা জরুরি।

২০১৪ ও ২০১৫ সালের মিনস্ক চুক্তির অধীনে ওএসসিই (অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ) ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে শান্তি পর্যবেক্ষণ করেছিল। কিন্তু বাস্তবে এই পর্যবেক্ষণ কার্যকর হয়নি।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী:
🔹 ২০১৭ সালে ৪ লাখবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হয়েছিল, নিহত হয়েছিল ৪৮৬ জন
🔹 ২০২১ সালে লঙ্ঘনের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৯৩,৯০২ বার, নিহত ৯১ জন
🔹 এর মাত্র দুই মাস পরই রাশিয়া পূর্ণদমে ইউক্রেনে হামলা চালায়।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে কী প্রয়োজন?

সাবেক সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে নতুন কৌশল ও শক্তিশালী বাহিনী দরকার।

বিশেষজ্ঞদের মতামত:
🔸 ড্রোন, স্যাটেলাইট ও এআইভিত্তিক পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন সামির পুরি, যিনি ওএসসিইর ইউক্রেন মিশনের সাবেক পর্যবেক্ষক।
🔸 রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘‘যদি ২,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্রন্টলাইন থাকে, তাহলে যুদ্ধবিরতি কে নিয়ন্ত্রণ করবে?’’

ইউরোপীয় বাহিনী কি সমাধান হতে পারে?

ইউরোপের দেশগুলো যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতৃত্বে একটি বিশেষ বাহিনী গঠনের কথা ভাবছে। কিন্তু এই বাহিনী শান্তিরক্ষার জন্য নয়, বরং ইউক্রেনের আকাশসীমা, সমুদ্রবন্দর এবং কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে।

এদিকে, জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের চিন্তা করা হলেও রাশিয়ার ভেটো ক্ষমতা এটিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি সমাধান কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি নিরপেক্ষ বেসামরিক অঞ্চল গড়ে তোলা হতে পারে একটি বাস্তবসম্মত সমাধান।
✅ সেখানে ইউক্রেন ও রাশিয়ার বিশেষ বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
✅ চীন বা রাশিয়ার অন্যান্য মিত্রদেশের সেনারা পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।

তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, রাশিয়ার আধিপত্যবাদী মনোভাবের কারণে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

শেষ কথা

যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হলে দুই পক্ষকেই আন্তরিক হতে হবে এবং পূর্বের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যদি রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই সহিংসতা এড়িয়ে চলার প্রতিশ্রুতি না নেয়, তাহলে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

জন ফোরম্যানের মতে, ‘‘শান্তিতে পৌঁছানোর আগে আরও অনেক বাধা আসবে। এসব বাধা অতিক্রম করাই আসল চ্যালেঞ্জ।’’

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ১১:২২:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি: কার্যকর করা কি আদৌ সম্ভব?

আপডেট: ১১:২২:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান মোটেও সহজ কাজ নয়। যুদ্ধবিরতির জন্য একটি সমঝোতায় পৌঁছানোও অত্যন্ত জটিল। সৌদি আরবের জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পর ইউক্রেন সর্বোচ্চ ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। তবে এই যুদ্ধবিরতি কীভাবে কার্যকর হবে, তা এখনও অস্পষ্ট।

যুদ্ধবিরতির বাস্তবতা: ইতিহাস কি বলে?

রাশিয়ার পূর্ব ইতিহাস অনুযায়ী, তারা বেশ কয়েকবার শান্তিচুক্তি লঙ্ঘন করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের জন্য একটি শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া থাকা জরুরি।

২০১৪ ও ২০১৫ সালের মিনস্ক চুক্তির অধীনে ওএসসিই (অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ) ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে শান্তি পর্যবেক্ষণ করেছিল। কিন্তু বাস্তবে এই পর্যবেক্ষণ কার্যকর হয়নি।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী:
🔹 ২০১৭ সালে ৪ লাখবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হয়েছিল, নিহত হয়েছিল ৪৮৬ জন
🔹 ২০২১ সালে লঙ্ঘনের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৯৩,৯০২ বার, নিহত ৯১ জন
🔹 এর মাত্র দুই মাস পরই রাশিয়া পূর্ণদমে ইউক্রেনে হামলা চালায়।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে কী প্রয়োজন?

সাবেক সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে নতুন কৌশল ও শক্তিশালী বাহিনী দরকার।

বিশেষজ্ঞদের মতামত:
🔸 ড্রোন, স্যাটেলাইট ও এআইভিত্তিক পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন সামির পুরি, যিনি ওএসসিইর ইউক্রেন মিশনের সাবেক পর্যবেক্ষক।
🔸 রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘‘যদি ২,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্রন্টলাইন থাকে, তাহলে যুদ্ধবিরতি কে নিয়ন্ত্রণ করবে?’’

ইউরোপীয় বাহিনী কি সমাধান হতে পারে?

ইউরোপের দেশগুলো যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতৃত্বে একটি বিশেষ বাহিনী গঠনের কথা ভাবছে। কিন্তু এই বাহিনী শান্তিরক্ষার জন্য নয়, বরং ইউক্রেনের আকাশসীমা, সমুদ্রবন্দর এবং কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে।

এদিকে, জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের চিন্তা করা হলেও রাশিয়ার ভেটো ক্ষমতা এটিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি সমাধান কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি নিরপেক্ষ বেসামরিক অঞ্চল গড়ে তোলা হতে পারে একটি বাস্তবসম্মত সমাধান।
✅ সেখানে ইউক্রেন ও রাশিয়ার বিশেষ বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
✅ চীন বা রাশিয়ার অন্যান্য মিত্রদেশের সেনারা পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।

তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, রাশিয়ার আধিপত্যবাদী মনোভাবের কারণে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

শেষ কথা

যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হলে দুই পক্ষকেই আন্তরিক হতে হবে এবং পূর্বের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যদি রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই সহিংসতা এড়িয়ে চলার প্রতিশ্রুতি না নেয়, তাহলে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

জন ফোরম্যানের মতে, ‘‘শান্তিতে পৌঁছানোর আগে আরও অনেক বাধা আসবে। এসব বাধা অতিক্রম করাই আসল চ্যালেঞ্জ।’’