০৮:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

চীন তৈরি করছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ‘বন্ধুত্বের হাসপাতাল’ — স্বাস্থ্যখাতে চীনের বিশাল বিনিয়োগের নতুন অধ্যায়

ডেস্ক নিউজ

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে, চীন সরকার ‘চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল’ নামে একটি আধুনিক, এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। এটি শুধু একটি হাসপাতাল নয়—এটি দুই দেশের বন্ধুত্বের প্রতীক এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বৈপ্লবিক উন্নয়নের বার্তা।

হাসপাতাল কোথায় হবে?

প্রস্তাবিত এই জেনারেল হাসপাতালটি ঢাকার মিরপুর, উত্তরা বা ধামরাই এলাকায় হতে পারে। পাশাপাশি, একটি টারসিয়ারি (উচ্চতর বিশেষায়িত) হাসপাতাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী বা আশেপাশের কোনো জেলায়। এর জন্য অন্তত ১২ একর ঝামেলামুক্ত জমির খোঁজ চলছে।

📌 তিনটি প্রধান প্রকল্প

১৯ ফেব্রুয়ারি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের সভায় চীনের বিনিয়োগে তিনটি বড় স্বাস্থ্য প্রকল্প চূড়ান্ত হয়:

  1. চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল

  2. টারসিয়ারি বিশেষায়িত হাসপাতাল

  3. জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য পুনর্বাসন সেন্টার

🔬 প্রযুক্তির ছোঁয়ায় চিকিৎসা

এখনই চীন থেকে রোবোটিক ফিজিওথেরাপি সেন্টারের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় তৈরি করা এই সেন্টার দেশের পুনর্বাসন চিকিৎসা ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।

🧬 চীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে কীভাবে যুক্ত?

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের সম্পর্ক বহু পুরোনো এবং বহুমুখী:

  • বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের একটি বড় অংশ চীন থেকে এপিআই (Active Pharmaceutical Ingredient) আমদানির ওপর নির্ভরশীল।

  • মেডিকেল যন্ত্রপাতির একটি বড় অংশও আসে চীন থেকে।

  • প্রতি বছর বহু ছাত্রছাত্রী মেডিকেল শিক্ষার জন্য চীনে যায়।

  • করোনাকালে বাংলাদেশের প্রধান টিকা সরবরাহকারী ছিল চীন।

🏥 ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও আসছে উন্নয়নের আওতায়

শুধু নতুন হাসপাতাল নয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আধুনিকায়নে চীন অর্থায়ন করবে। প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি হয়ে গেছে, দ্রুত অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।

💬 স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কী বললেন?

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানিয়েছেন, “চীন সরকার বাংলাদেশের মানুষকে এক হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল উপহার দিচ্ছে। এটি শুধু অবকাঠামো নয়, এটি একটি বন্ধুত্বের স্মারক, যা দুই দেশের সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।”

🌐 দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত হচ্ছে

খুব শিগগিরই চীন থেকে ২০০ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে। এই সফরের সময় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে।

✨ উপসংহার

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে চীনের এই বড় বিনিয়োগ নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী। এটি স্বাস্থ্যসেবার মান ও পরিসরকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশে চিকিৎসা শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, বরং উত্তরবঙ্গেও একটি ‘মেডিকেল হাব’ গড়ে ওঠার দ্বারপ্রান্তে।

এই হাসপাতাল শুধু চিকিৎসা নয়, ‍এটি হবে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রীর এক জীবন্ত সৌধ।
একজন স্বাস্থ্য বিশ্লেষক

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ১০:৫৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

চীন তৈরি করছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ‘বন্ধুত্বের হাসপাতাল’ — স্বাস্থ্যখাতে চীনের বিশাল বিনিয়োগের নতুন অধ্যায়

আপডেট: ১০:৫৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে, চীন সরকার ‘চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল’ নামে একটি আধুনিক, এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। এটি শুধু একটি হাসপাতাল নয়—এটি দুই দেশের বন্ধুত্বের প্রতীক এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বৈপ্লবিক উন্নয়নের বার্তা।

হাসপাতাল কোথায় হবে?

প্রস্তাবিত এই জেনারেল হাসপাতালটি ঢাকার মিরপুর, উত্তরা বা ধামরাই এলাকায় হতে পারে। পাশাপাশি, একটি টারসিয়ারি (উচ্চতর বিশেষায়িত) হাসপাতাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী বা আশেপাশের কোনো জেলায়। এর জন্য অন্তত ১২ একর ঝামেলামুক্ত জমির খোঁজ চলছে।

📌 তিনটি প্রধান প্রকল্প

১৯ ফেব্রুয়ারি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের সভায় চীনের বিনিয়োগে তিনটি বড় স্বাস্থ্য প্রকল্প চূড়ান্ত হয়:

  1. চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল

  2. টারসিয়ারি বিশেষায়িত হাসপাতাল

  3. জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য পুনর্বাসন সেন্টার

🔬 প্রযুক্তির ছোঁয়ায় চিকিৎসা

এখনই চীন থেকে রোবোটিক ফিজিওথেরাপি সেন্টারের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় তৈরি করা এই সেন্টার দেশের পুনর্বাসন চিকিৎসা ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।

🧬 চীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে কীভাবে যুক্ত?

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের সম্পর্ক বহু পুরোনো এবং বহুমুখী:

  • বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের একটি বড় অংশ চীন থেকে এপিআই (Active Pharmaceutical Ingredient) আমদানির ওপর নির্ভরশীল।

  • মেডিকেল যন্ত্রপাতির একটি বড় অংশও আসে চীন থেকে।

  • প্রতি বছর বহু ছাত্রছাত্রী মেডিকেল শিক্ষার জন্য চীনে যায়।

  • করোনাকালে বাংলাদেশের প্রধান টিকা সরবরাহকারী ছিল চীন।

🏥 ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও আসছে উন্নয়নের আওতায়

শুধু নতুন হাসপাতাল নয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আধুনিকায়নে চীন অর্থায়ন করবে। প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি হয়ে গেছে, দ্রুত অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।

💬 স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কী বললেন?

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানিয়েছেন, “চীন সরকার বাংলাদেশের মানুষকে এক হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল উপহার দিচ্ছে। এটি শুধু অবকাঠামো নয়, এটি একটি বন্ধুত্বের স্মারক, যা দুই দেশের সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।”

🌐 দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত হচ্ছে

খুব শিগগিরই চীন থেকে ২০০ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে। এই সফরের সময় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে।

✨ উপসংহার

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে চীনের এই বড় বিনিয়োগ নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী। এটি স্বাস্থ্যসেবার মান ও পরিসরকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশে চিকিৎসা শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, বরং উত্তরবঙ্গেও একটি ‘মেডিকেল হাব’ গড়ে ওঠার দ্বারপ্রান্তে।

এই হাসপাতাল শুধু চিকিৎসা নয়, ‍এটি হবে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রীর এক জীবন্ত সৌধ।
একজন স্বাস্থ্য বিশ্লেষক