০৩:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে  বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠক

ডেস্ক নিউজ

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা। লন্ডন, যুক্তরাজ্য, ১৩ জুন ২০২৫

ছবি সংগৃহীত

লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা) অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টা) বৈঠক শেষ হয়। পরে বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটার দিকে ওই হোটেলেই যৌথ সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে কথা বলেন খলিলুর রহমান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে  বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা তাঁদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। আজ শুক্রবার লন্ডনে বৈঠক-পরবর্তী যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বৈঠকের আলোচনায় তাঁরা সন্তুষ্ট হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই একটি যৌথ বিবৃতি পড়ে শোনান নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। এতে বলা হয়, অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন, ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচার বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এ অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।

লিখিত বিবৃতি পড়ে শোনানোর পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সাতটি প্রশ্ন নেওয়া হবে। আপনারা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে প্রশ্নগুলো করবেন। এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সম্পূরক প্রশ্নেরও জবাব দেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য যেখানে হবে, স্বাভাবিকভাবে ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে যে সিদ্ধান্ত হবে, স্বাক্ষরিত তো হবেই, না হওয়ার কোনো কারণ তো নেই।’ ওই সাংবাদিক আরেকটি সম্পূরক প্রশ্ন করতে গেলে প্রেস সচিব শফিকুল আলম ‘প্লিজ, প্লিজ’ বলে তাঁকে থামিয়ে আরেক সাংবাদিককে প্রশ্ন করার সুযোগ করে দেন।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নির্বাচনের একটি সঠিক তারিখ নির্ধারণে আসলে সমস্যাটা কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তর দেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এর কোনো সমস্যাই নেই। আমরা কোনো সমস্যা দেখছি না, কেউ দেখলে পরে এটা ভুল দেখছেন। নির্বাচনের সম্পর্কে আজকে যৌথ বিবৃতিতে আমরা বলে দিয়েছি দুই পক্ষই এবং আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন শিগগিরই একটা তারিখ ঘোষণা করবে।’

বৈঠকে কি শুধু নির্বাচন নিয়েই কথা হয়েছে, নাকি দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও অন্যান্য বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, ‘সব বিষয়ে আলোচনা তো হবে, স্বাভাবিক। আমরা তো নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। সবাই আমরা চাই, দেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা নিয়েছি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কাজটা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে আমরা সবাই ঐকমত্যে এসেছি, শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও সেটা আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সংস্কার নিয়ে যে দীর্ঘ আলোচনা হচ্ছিল, সেই সংস্কার বিষয়ে বিএনপির বা তারেক রহমান সাহেবের পক্ষ থেকে আপনারা কীভাবে রিঅ্যাক্ট (প্রতিক্রিয়া) করেছেন? বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আমীর খসরু বলেন, ‘আবার…আমি শুনিনি।’ পরে ওই সাংবাদিক বলেন, সংস্কার নিয়ে বর্তমান সরকারের যে একটা বিশাল রূপরেখা তৈরি হয়েছে, একটা বিশাল তালিকা, সেই তালিকা নিশ্চয়ই আজকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। সংস্কার বিষয়ে আপনাদের মতামত কী? বিএনপি কীভাবে সেটাকে গ্রহণ করছে? এ প্রশ্নের উত্তরে আমীর খসরু বলেন, ‘এটা তো পরিষ্কার। এখানে না বোঝার কোনো কারণ নেই। বিষয়টা হচ্ছে সংস্কার। প্রধান উপদেষ্টা সাহেব, তারেক রহমান সাহেব আমরা সবাই একই কথা বলছি, যে বিষয়গুলোতে তো ঐকমত্য হবে, সেগুলোই তো সংস্কার হবে, তাই না?’ তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কারের বিষয় তো একটা চলমান প্রক্রিয়া। এমন না যে সব সংস্কার এখনই শেষ হয়ে যাবে। নির্বাচনের আগেও কিছু সংস্কার হবে, যেখানে ঐকমত্য হবে আর নির্বাচনের পরও সংস্কার অব্যাহত থাকবে। কারণ, আমরা যে দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছি, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সবাই অনুভব করছে। সুতরাং আগে-পরে সংস্কার চলতে থাকবে।’

এরপর আরেকজন সাংবাদিক জানতে চান, তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে এখানে (লন্ডন) অবস্থান করছেন এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও বলেছেন, তাঁর দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই। তাঁর এ ব্যাপারে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না বা তিনি কবে দেশে ফিরতে পারেন? এ প্রশ্নের উত্তর দেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলোচনার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা মনে করি না। তারেক রহমান সাহেব যখনই ইচ্ছা দেশে ফিরে যেতে পারবেন। সুতরাং এটার সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন, সময়মতো।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তাঁর সময়ে, অর্থাৎ নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনার হত্যাযজ্ঞের বিচারপ্রক্রিয়া তিনি শেষ করতে চান এবং পরে তাঁকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন—এমন কথা উল্লেখ করে একজন সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেন, এ ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না এবং যদি সেটা হয়ে থাকে, তাহলে এই নির্বাচনের রূপরেখার সঙ্গে এটা কোনো প্রভাব ফেলবে কি না?
এর জবাবে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘যৌথ বিবৃতিতে এর উত্তর দেওয়া আছে। সংস্কার এবং বিচার—দুই বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতির কথা বলা হয়েছে এবং আমরা মোটামুটি কনফিডেন্ট (আত্মবিশ্বাসী) যে এই অগ্রগতি আমরা নির্বাচনের আগেই দেখতে পাব।’ খলিলুর রহমানের কথার সঙ্গে আমীর খসরু একটি বাক্য যুক্ত করেন, ‘সম্পন্ন করা যাবে।’

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখানে আলোচনার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।’ এ প্রশ্নে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এটা তাদেরকে (এনসিপি) জিজ্ঞেস করুন। প্রত্যেকটি দলের নিজস্ব মতামত আছে। তবে আমরা সবাইকে নিয়ে নির্বাচনটা করতে চাচ্ছি।’

আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তাহলে কি আমরা বলতে পারি যে এপ্রিলে ঘোষিত যে নির্বাচনের রূপরেখা, সেখান থেকে সরকার কিছুটা সরে আসতে চাচ্ছে বা আসবে? এর উত্তরে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘যৌথ ঘোষণায় এই বিষয়টি সুস্পষ্টই বলা আছে। আপনারা শুনেছেন। যদি সব কাজ সময়মতো আমরা করতে পারি এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হয়, তাহলে নিশ্চয়ই সেটা করা যেতে পারে।’ খলিলুর রহমানের এ উত্তরের সঙ্গে আমীর খসরু তাঁর কিছু কথা যুক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘বৈঠকটা প্রথমে আমাদের দুই সাইডের ডেলিগেশনের (প্রতিনিধিদল) সঙ্গে হয়েছে এবং পরে তাঁরা দুজন (অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমান) ওয়ান-টু-ওয়ান দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে শেষ প্রশ্ন ছিল, ‘আপনারা কি সন্তুষ্ট?’ এ প্রশ্নের উত্তর সমস্বরে দেন খলিলুর রহমান ও আমীর খসরু মাহমুদ। দুজনই বলেন, ‘নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট।’ এর সঙ্গে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা তো বলছি নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ সংবাদ সম্মেলনের শেষ বাক্যে খলিলুর রহমান বলেন, ‘সন্তুষ্ট না হলে তো যৌথ ঘোষণা আসার কথা নয়।’

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০৩:১৬:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
১১

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে  বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠক

আপডেট: ০৩:১৬:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা। লন্ডন, যুক্তরাজ্য, ১৩ জুন ২০২৫

ছবি সংগৃহীত

লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা) অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টা) বৈঠক শেষ হয়। পরে বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটার দিকে ওই হোটেলেই যৌথ সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে কথা বলেন খলিলুর রহমান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে  বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা তাঁদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। আজ শুক্রবার লন্ডনে বৈঠক-পরবর্তী যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বৈঠকের আলোচনায় তাঁরা সন্তুষ্ট হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই একটি যৌথ বিবৃতি পড়ে শোনান নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। এতে বলা হয়, অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন, ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচার বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এ অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।

লিখিত বিবৃতি পড়ে শোনানোর পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সাতটি প্রশ্ন নেওয়া হবে। আপনারা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে প্রশ্নগুলো করবেন। এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সম্পূরক প্রশ্নেরও জবাব দেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য যেখানে হবে, স্বাভাবিকভাবে ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে যে সিদ্ধান্ত হবে, স্বাক্ষরিত তো হবেই, না হওয়ার কোনো কারণ তো নেই।’ ওই সাংবাদিক আরেকটি সম্পূরক প্রশ্ন করতে গেলে প্রেস সচিব শফিকুল আলম ‘প্লিজ, প্লিজ’ বলে তাঁকে থামিয়ে আরেক সাংবাদিককে প্রশ্ন করার সুযোগ করে দেন।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নির্বাচনের একটি সঠিক তারিখ নির্ধারণে আসলে সমস্যাটা কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তর দেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এর কোনো সমস্যাই নেই। আমরা কোনো সমস্যা দেখছি না, কেউ দেখলে পরে এটা ভুল দেখছেন। নির্বাচনের সম্পর্কে আজকে যৌথ বিবৃতিতে আমরা বলে দিয়েছি দুই পক্ষই এবং আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন শিগগিরই একটা তারিখ ঘোষণা করবে।’

বৈঠকে কি শুধু নির্বাচন নিয়েই কথা হয়েছে, নাকি দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও অন্যান্য বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, ‘সব বিষয়ে আলোচনা তো হবে, স্বাভাবিক। আমরা তো নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। সবাই আমরা চাই, দেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা নিয়েছি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কাজটা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে আমরা সবাই ঐকমত্যে এসেছি, শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও সেটা আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সংস্কার নিয়ে যে দীর্ঘ আলোচনা হচ্ছিল, সেই সংস্কার বিষয়ে বিএনপির বা তারেক রহমান সাহেবের পক্ষ থেকে আপনারা কীভাবে রিঅ্যাক্ট (প্রতিক্রিয়া) করেছেন? বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আমীর খসরু বলেন, ‘আবার…আমি শুনিনি।’ পরে ওই সাংবাদিক বলেন, সংস্কার নিয়ে বর্তমান সরকারের যে একটা বিশাল রূপরেখা তৈরি হয়েছে, একটা বিশাল তালিকা, সেই তালিকা নিশ্চয়ই আজকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। সংস্কার বিষয়ে আপনাদের মতামত কী? বিএনপি কীভাবে সেটাকে গ্রহণ করছে? এ প্রশ্নের উত্তরে আমীর খসরু বলেন, ‘এটা তো পরিষ্কার। এখানে না বোঝার কোনো কারণ নেই। বিষয়টা হচ্ছে সংস্কার। প্রধান উপদেষ্টা সাহেব, তারেক রহমান সাহেব আমরা সবাই একই কথা বলছি, যে বিষয়গুলোতে তো ঐকমত্য হবে, সেগুলোই তো সংস্কার হবে, তাই না?’ তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কারের বিষয় তো একটা চলমান প্রক্রিয়া। এমন না যে সব সংস্কার এখনই শেষ হয়ে যাবে। নির্বাচনের আগেও কিছু সংস্কার হবে, যেখানে ঐকমত্য হবে আর নির্বাচনের পরও সংস্কার অব্যাহত থাকবে। কারণ, আমরা যে দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছি, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সবাই অনুভব করছে। সুতরাং আগে-পরে সংস্কার চলতে থাকবে।’

এরপর আরেকজন সাংবাদিক জানতে চান, তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে এখানে (লন্ডন) অবস্থান করছেন এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও বলেছেন, তাঁর দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই। তাঁর এ ব্যাপারে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না বা তিনি কবে দেশে ফিরতে পারেন? এ প্রশ্নের উত্তর দেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলোচনার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা মনে করি না। তারেক রহমান সাহেব যখনই ইচ্ছা দেশে ফিরে যেতে পারবেন। সুতরাং এটার সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন, সময়মতো।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তাঁর সময়ে, অর্থাৎ নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনার হত্যাযজ্ঞের বিচারপ্রক্রিয়া তিনি শেষ করতে চান এবং পরে তাঁকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন—এমন কথা উল্লেখ করে একজন সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেন, এ ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না এবং যদি সেটা হয়ে থাকে, তাহলে এই নির্বাচনের রূপরেখার সঙ্গে এটা কোনো প্রভাব ফেলবে কি না?
এর জবাবে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘যৌথ বিবৃতিতে এর উত্তর দেওয়া আছে। সংস্কার এবং বিচার—দুই বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতির কথা বলা হয়েছে এবং আমরা মোটামুটি কনফিডেন্ট (আত্মবিশ্বাসী) যে এই অগ্রগতি আমরা নির্বাচনের আগেই দেখতে পাব।’ খলিলুর রহমানের কথার সঙ্গে আমীর খসরু একটি বাক্য যুক্ত করেন, ‘সম্পন্ন করা যাবে।’

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখানে আলোচনার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।’ এ প্রশ্নে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এটা তাদেরকে (এনসিপি) জিজ্ঞেস করুন। প্রত্যেকটি দলের নিজস্ব মতামত আছে। তবে আমরা সবাইকে নিয়ে নির্বাচনটা করতে চাচ্ছি।’

আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তাহলে কি আমরা বলতে পারি যে এপ্রিলে ঘোষিত যে নির্বাচনের রূপরেখা, সেখান থেকে সরকার কিছুটা সরে আসতে চাচ্ছে বা আসবে? এর উত্তরে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘যৌথ ঘোষণায় এই বিষয়টি সুস্পষ্টই বলা আছে। আপনারা শুনেছেন। যদি সব কাজ সময়মতো আমরা করতে পারি এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হয়, তাহলে নিশ্চয়ই সেটা করা যেতে পারে।’ খলিলুর রহমানের এ উত্তরের সঙ্গে আমীর খসরু তাঁর কিছু কথা যুক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘বৈঠকটা প্রথমে আমাদের দুই সাইডের ডেলিগেশনের (প্রতিনিধিদল) সঙ্গে হয়েছে এবং পরে তাঁরা দুজন (অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমান) ওয়ান-টু-ওয়ান দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে শেষ প্রশ্ন ছিল, ‘আপনারা কি সন্তুষ্ট?’ এ প্রশ্নের উত্তর সমস্বরে দেন খলিলুর রহমান ও আমীর খসরু মাহমুদ। দুজনই বলেন, ‘নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট।’ এর সঙ্গে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা তো বলছি নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ সংবাদ সম্মেলনের শেষ বাক্যে খলিলুর রহমান বলেন, ‘সন্তুষ্ট না হলে তো যৌথ ঘোষণা আসার কথা নয়।’