সেখান থেকে পাঁচতলায় চলে যাই। প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনেক আহত শিক্ষার্থীর এখানে চিকিৎসা চলছে। আহত শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই শিশু।
এর আগে বেলা তিনটার দিকে ৫২০ নম্বর কক্ষের সামনে মেঝেতে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ভাগনি মেহরিনের স্কুলড্রেস ধরে কাঁদছিলেন ফাহাদ নিয়ন। পাশে একজন নারী নিয়নকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেও কাঁদছিলেন। নিয়ন বলছিলেন, ‘ও (মেহরিন) খুব নিষ্পাপ। ও সারা দিন পড়াশোনা করে। ওর দুই হাত ও মুখ পুড়ে গেছে।’
পাশেই ছেলেকে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন ইয়াসমিন আক্তার। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে তাঁর পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে নুরে জান্নাতের কপাল পুড়ে গেছে, মুখ ঝলসে গেছে, মাথা ফেটে গেছে। পুড়েছে পিঠও। ইয়াসমিন কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমার মেয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছে। মেয়ে বলে যে মা, আমার সব জ্বলে।’
ইয়াসমিনের পাশে মেঝেতে বসে বিড়বিড় করে একা একা কথা বলছিলেন আর কাঁদছিলেন নাসিমা বেগম। তিনি বিলাপ করছিলেন, ‘এমন দশা ক্যামনে হইছেরে। কত মায়ের বুক খালি হইছেরে। আমার রোহান যন্ত্রণায় কাতরাইতাছেরে।’ নাসিমা বেগমের সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে রবিউল হাসান রোহানের শরীর পুড়ে গেছে।
স্বজনদের আহাজারি যেন থামছিলই না। এক বিষণ্ন পরিবেশ। চিকিৎসকদের কেউ ডাক দেবেন, এ অপেক্ষায় ৫২০ নম্বর কক্ষের সামনে থেকে স্বজনেরা সরতে চাইছিলেন না। ভিড়ের কারণে নতুন কোনো আহত ব্যক্তিকে ৫২০ নম্বর কক্ষে
ঢোকাতে বেগ পেতে হচ্ছিল। স্বেচ্ছাসেবকেরা জটলা সরিয়ে যাতায়াতের রাস্তাও তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন। এই কক্ষ থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ পর পর চিকিৎসকেরা ভিড় না করার জন্য অনুরোধ করছিলেন। আর সতর্ক করে বলছিলেন, এত লোক ভিড় করলে চিকিৎসা দেওয়া কঠিন। তা ছাড়া রোগীর ইনফেকশন (সংক্রমণ) হতে পারে।
একসময় পাঁচতলা থেকে নিচে নেমে দেখলাম প্রচণ্ড ভিড়। জরুরি বিভাগের সামনে মানুষ আর মানুষ। পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। কেউ রক্ত দেওয়ার জন্য দৌড়াচ্ছিলেন, কেউ রক্ত দিতে অপেক্ষা করছিলেন। অনেকেই রক্ত সংগ্রহের জন্য প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আবার স্বজনেরা আহত ব্যক্তিদের খোঁজে ছুটছিলেন।
দুপুরের পর থেকেই সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা হাসপাতালে আসছিলেন আহতদের খোঁজ নিতে। সব মিলিয়ে হাসপাতালে চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
তবে সন্ধ্যার আগে আগে প্রয়োজন ছাড়া কাউকে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। পরিস্থিতি সামাল দিতে একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও তৎপর হতে দেখা যায়।















