মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বাতিলের আহ্বান ইসলামী আন্দোলনের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান অপরিবর্তিত
মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বাতিলের আহ্বান ইসলামী আন্দোলনের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান অপরিবর্তিত
বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, নববর্ষ উদ্যাপনের কোনো আয়োজনে ইসলামবিরোধী উপাদান থাকা উচিত নয় এবং ‘মঙ্গল’ শব্দ ও সংশ্লিষ্ট ধারণাকে তিনি ইসলামি বিশ্বাসের পরিপন্থী বলে আখ্যা দেন।
বুধবার (৫ এপ্রিল) দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ বক্তব্য দেন বলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলা নববর্ষ একটি ঋতুভিত্তিক সাংস্কৃতিক ধারা, যার সূচনা করেছিলেন মোগল সম্রাট আকবর। ইসলামি বর্ষপঞ্জি অনুসারে সৌরভিত্তিক বাংলা সনের প্রবর্তন করা হয় কৃষিকাজ ও রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে। ইসলামী আন্দোলনের মতে, দেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সংস্কৃতিতে ইসলামবিরোধী উপকরণের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়।
মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, “নববর্ষ উদ্যাপন শালীনভাবে করা যেতে পারে। তবে ‘মঙ্গল’ শব্দ বা ধারণা ব্যবহার করলে তা ভুল বিশ্বাসকে উৎসাহিত করে এবং তা ইসলামি দৃষ্টিকোণে গ্রহণযোগ্য নয়।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান: “মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম জানান, “মঙ্গল শোভাযাত্রা কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতীকী বহিঃপ্রকাশ। এতে অসাম্প্রদায়িকতা, শুভবোধ ও ন্যায়ের প্রতিফলন ঘটে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন এবং মঙ্গল শোভাযাত্রা বাংলাদেশে ইউনেস্কো স্বীকৃত একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এটি বাদ দেওয়া বা পরিবর্তনের প্রশ্ন আসা উচিত নয়।”
বিশ্লেষকদের মতামত
সাংস্কৃতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আহমদ কামাল বলেন, “বাংলাদেশের সংস্কৃতি বহু ধর্ম, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মিশ্রণে গঠিত। মঙ্গল শোভাযাত্রা একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রতীকী আয়োজন—যেখানে মঙ্গল মানে কুসংস্কার নয় বরং শুভ কামনা।”
তিনি আরও বলেন, “কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর মতামতকে সম্মান জানানো যেতে পারে, তবে তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় বা জাতিগত সংস্কৃতিকে রূপান্তর করা যুক্তিযুক্ত নয়।”
পাবলিক প্রতিক্রিয়া
সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে বিভক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই ইসলামী আন্দোলনের বক্তব্যকে ধর্মীয় অনুধাবনের অংশ হিসেবে দেখলেও, অন্য একাংশ এটিকে অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে।