০৫:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫

‘আপনি আজ কাঁদলেন কেন’—প্রশ্নে পলকের নীরবতা, আদালতের কাঠগড়ায় শীর্ষ নেতাদের বেদনাবিধুর দিন

ডেস্ক নিউজ

লেখক: Anower Bin Mahamud
প্রকাশকাল: ৯ জুলাই ২০২৫


ভূমিকা: কান্না, কারাগার ও কাঠগড়ার দিনে এক রাজনৈতিক বাস্তবতা

রাজনীতির মোড় ঘুরলেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। একসময় যাঁরা ছিলেন মন্ত্রী, নীতিনির্ধারক ও শীর্ষপর্যায়ের নেতৃত্বে, আজ তাঁরা আদালতের কাঠগড়ায় নত দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে। আজ বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এক হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যের জন্ম হয়—সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক অশ্রুসিক্ত, অন্যদিকে সাবেক মন্ত্রী সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক ও দীপু মনিরা একে অপরের সঙ্গে শান্ত স্বরে কথা বলছেন।

নীরব কান্নায় পলক: এক প্রশ্ন, কোনো উত্তর নেই

আদালতকক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় এক সংবাদকর্মী জিজ্ঞেস করেন, ‘ও পলক ভাই, আপনি আজ কাঁদলেন কেন?’
এই প্রশ্নে কোনো উত্তর দেননি পলক। নীরব ছিলেন তিনি, তবে চোখের ভাষা বলে দিচ্ছিল অনেক কিছু। কিছুক্ষণ আগেই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছতে দেখা গেছে তাঁকে।

এ যেন আর একজন রাজনীতিবিদ নন, বরং একজন সাধারণ মানুষের আবেগের প্রকাশ, যিনি সব হারানোর বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে।

এক কাঠগড়ায় সালমান, আনিসুল ও দীপু মনি

সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে কাঠগড়ায় এসে দাঁড়ান সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক। বিমর্ষ মুখ, ভারাক্রান্ত চেহারা। কিছুক্ষণ পর যোগ দেন দীপু মনি। এরপর শুরু হয় সাবেক সহকর্মীদের মধ্যে শান্ত স্বরে কথা বলা—অন্যরকম এক মন্ত্রীসভার দৃশ্য, যেখানে নেই পদমর্যাদার গর্ব, আছে কেবল নীরব সংহতি।

কারাগারে একই ভবনে বন্দিত্বের জীবন

পুলিশ ও আইনজীবীদের সূত্রে জানা গেছে, সালমান, আনিসুল, আমু ও দীপু মনি আছেন কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ‘চম্পাকলি ভবনে’। তাঁদের প্রতিদিনের সঙ্গী পত্রিকা, ধর্মীয় গ্রন্থ ও আইনের বই। নিকটাত্মীয়দের অভাব, এবং ১৫ দিন পরপর সাক্ষাতের সীমিত সুযোগ তাঁদের মানসিক অবস্থা আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রথম শ্রেণির বন্দীদের জন্য বরাদ্দ থাকে মাছ-মাংস, এমনকি উৎসবের দিন পান্তা-ইলিশও। তবে এই ছোট ছোট সুবিধাও তাঁদের হৃদয়ের ভার কমাতে পারছে না।

মামলা ও আইনি প্রক্রিয়ায় নতুন মোড়

যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় আজ আদালতে হাজির করা হয় পলক, সালমান, আনিসুল, দীপু মনি, আমুসহ অন্যদের। আদালত এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি, তবে এই মামলার শুনানি ও প্রিজনভ্যানে তাঁদের একত্রে উপস্থিতি আগামীর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের একটি দিকচিহ্ন হয়ে উঠতে পারে।

পলকের অশ্রু ও এক প্রশ্নহীন বিদায়

শুনানি শেষে আদালত কক্ষ থেকে বের করার সময় পলকের চোখে আবারও জল দেখা যায়। যখন তাঁকে পাঁচতলা থেকে নামিয়ে আনা হচ্ছিল, তখন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আপনি আজ কাঁদলেন কেন?’
তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে চলতে থাকেন।

উপসংহার: ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে রাজনীতির মানুষগুলো

আজকের দিনটি রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অসাধারণ দলিল। যে নেতারা একসময় দেশের প্রতিদিনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরাই আজ কাঠগড়ায়, চোখে জল, মুখে নীরবতা।
জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকের কান্না, সালমান ও আনিসুলের নত দৃষ্টি, দীপু মনির নিস্তব্ধতা—সবই এক অশ্রুত রাজনৈতিক ভাষা যা ইতিহাস মনে রাখবে।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০৫:০২:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

‘আপনি আজ কাঁদলেন কেন’—প্রশ্নে পলকের নীরবতা, আদালতের কাঠগড়ায় শীর্ষ নেতাদের বেদনাবিধুর দিন

আপডেট: ০৫:০২:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

লেখক: Anower Bin Mahamud
প্রকাশকাল: ৯ জুলাই ২০২৫


ভূমিকা: কান্না, কারাগার ও কাঠগড়ার দিনে এক রাজনৈতিক বাস্তবতা

রাজনীতির মোড় ঘুরলেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। একসময় যাঁরা ছিলেন মন্ত্রী, নীতিনির্ধারক ও শীর্ষপর্যায়ের নেতৃত্বে, আজ তাঁরা আদালতের কাঠগড়ায় নত দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে। আজ বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এক হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যের জন্ম হয়—সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক অশ্রুসিক্ত, অন্যদিকে সাবেক মন্ত্রী সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক ও দীপু মনিরা একে অপরের সঙ্গে শান্ত স্বরে কথা বলছেন।

নীরব কান্নায় পলক: এক প্রশ্ন, কোনো উত্তর নেই

আদালতকক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় এক সংবাদকর্মী জিজ্ঞেস করেন, ‘ও পলক ভাই, আপনি আজ কাঁদলেন কেন?’
এই প্রশ্নে কোনো উত্তর দেননি পলক। নীরব ছিলেন তিনি, তবে চোখের ভাষা বলে দিচ্ছিল অনেক কিছু। কিছুক্ষণ আগেই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছতে দেখা গেছে তাঁকে।

এ যেন আর একজন রাজনীতিবিদ নন, বরং একজন সাধারণ মানুষের আবেগের প্রকাশ, যিনি সব হারানোর বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে।

এক কাঠগড়ায় সালমান, আনিসুল ও দীপু মনি

সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে কাঠগড়ায় এসে দাঁড়ান সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক। বিমর্ষ মুখ, ভারাক্রান্ত চেহারা। কিছুক্ষণ পর যোগ দেন দীপু মনি। এরপর শুরু হয় সাবেক সহকর্মীদের মধ্যে শান্ত স্বরে কথা বলা—অন্যরকম এক মন্ত্রীসভার দৃশ্য, যেখানে নেই পদমর্যাদার গর্ব, আছে কেবল নীরব সংহতি।

কারাগারে একই ভবনে বন্দিত্বের জীবন

পুলিশ ও আইনজীবীদের সূত্রে জানা গেছে, সালমান, আনিসুল, আমু ও দীপু মনি আছেন কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ‘চম্পাকলি ভবনে’। তাঁদের প্রতিদিনের সঙ্গী পত্রিকা, ধর্মীয় গ্রন্থ ও আইনের বই। নিকটাত্মীয়দের অভাব, এবং ১৫ দিন পরপর সাক্ষাতের সীমিত সুযোগ তাঁদের মানসিক অবস্থা আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রথম শ্রেণির বন্দীদের জন্য বরাদ্দ থাকে মাছ-মাংস, এমনকি উৎসবের দিন পান্তা-ইলিশও। তবে এই ছোট ছোট সুবিধাও তাঁদের হৃদয়ের ভার কমাতে পারছে না।

মামলা ও আইনি প্রক্রিয়ায় নতুন মোড়

যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় আজ আদালতে হাজির করা হয় পলক, সালমান, আনিসুল, দীপু মনি, আমুসহ অন্যদের। আদালত এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি, তবে এই মামলার শুনানি ও প্রিজনভ্যানে তাঁদের একত্রে উপস্থিতি আগামীর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের একটি দিকচিহ্ন হয়ে উঠতে পারে।

পলকের অশ্রু ও এক প্রশ্নহীন বিদায়

শুনানি শেষে আদালত কক্ষ থেকে বের করার সময় পলকের চোখে আবারও জল দেখা যায়। যখন তাঁকে পাঁচতলা থেকে নামিয়ে আনা হচ্ছিল, তখন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আপনি আজ কাঁদলেন কেন?’
তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে চলতে থাকেন।

উপসংহার: ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে রাজনীতির মানুষগুলো

আজকের দিনটি রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অসাধারণ দলিল। যে নেতারা একসময় দেশের প্রতিদিনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরাই আজ কাঠগড়ায়, চোখে জল, মুখে নীরবতা।
জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকের কান্না, সালমান ও আনিসুলের নত দৃষ্টি, দীপু মনির নিস্তব্ধতা—সবই এক অশ্রুত রাজনৈতিক ভাষা যা ইতিহাস মনে রাখবে।