০৬:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

ট্রাম্পের কাঁকড়া ব্যবসা: ঢাকায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের নামে ট্রেড লাইসেন্স!

ডেস্ক নিউজ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে ই-ট্রেড লাইসেন্সটি ইস্যু করা হয়েছে ১১ মার্চ। ছবি: ডিএনসিসি থেকে সংগৃহীত

ডিএনসিসির অটোমেটেড সিস্টেমে চাঞ্চল্যকর ফাঁকফোকর

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে ই-ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এমনই এক ভুয়া লাইসেন্স ইস্যু করেছে ডিএনসিসি, যেখানে ট্রাম্পের ছবি, নিউইয়র্কের ঠিকানা এবং তার মা-বাবার আসল নামও রয়েছে!

কীভাবে সম্ভব হলো এমন ঘটনা?

ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগ নিশ্চিত করেছে, ১১ মার্চ ট্রাম্পের নামে ইস্যু হওয়া ট্রেড লাইসেন্সের মালিকানা ‘ট্রাম্প এসোসিয়েশন’-এর নামে করা হয়েছে, যার ব্যবসার ধরন ‘কাঁকড়া মাছ বিক্রেতা’। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ঢাকার আফতাবনগরে, যদিও সেটি আদৌ কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়।

লাইসেন্স পেতে নির্ধারিত ২,২৬৫ টাকা ফি পরিশোধ করা হয়েছে এবং মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। লাইসেন্স আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া হয়েছে একটি অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্র ও এক চীনা নাগরিকের বাংলাদেশের ভিসার কপি। তবে, অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভাড়া নেওয়া অফিসের ঠিকানাটিও প্রকৃতপক্ষে আবাসিক ভবন!

ডিএনসিসির গাফিলতি না কি ‘পরীক্ষা’?

ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান স্বীকার করেছেন, এটি আসলে একটি ‘পরীক্ষামূলক’ কাজ ছিল। তাঁর ভাষায়, “আমাদের কর্মীরাই ট্রায়াল হিসেবে এটি করেছেন, দেখানোর জন্য যে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ইলন মাস্ক বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামেও লাইসেন্স হয়ে যেতে পারে।”

স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির ফাঁকফোকর

সাম্প্রতিক সময়ে ডিএনসিসি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুর ব্যবস্থা চালু করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, আবেদনকারীর নথি আপলোড করলেই লাইসেন্স অনুমোদিত হয়, কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই! এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে অসংখ্য লাইসেন্স তৈরি হচ্ছে।

ডিএনসিসির একাধিক কর্মকর্তার মতে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির কারণে ব্যবসা যাচাইয়ের সুযোগ নেই, ফলে অনেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে লাইসেন্স পাচ্ছেন। এমনকি, আগে যেখানে বিশেষ অনুমতি দরকার ছিল, এখন সেসব ছাড়াই লাইসেন্স ইস্যু হয়ে যাচ্ছে।

ঢাকার ব্যবসা জগতে ভূয়া লাইসেন্সের ছড়াছড়ি!

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অব্যবস্থার কারণে একদিকে সরকারি রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতারণার সুযোগও তৈরি হচ্ছে। অনেকে কম ফি দিয়ে ভিন্ন নামে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে, আবার অনেক ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে চললেও বকেয়া ফি না দিয়েই নতুন লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে।

ডিএনসিসি ইতোমধ্যে সমস্যার সমাধানে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে আবাসিক এলাকাগুলোতে ই-ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু বন্ধ করা হবে এবং তথ্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হবে।

উপসংহার: সিস্টেম আপগ্রেড না হলে বিপদ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে ঢাকায় কাঁকড়ার ব্যবসা হয়তো একটি হাস্যকর ঘটনা, কিন্তু এটি দেখিয়ে দিয়েছে, সিস্টেমের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বড় ধরনের প্রতারণা হতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—ডিএনসিসি কি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে এই দুর্বলতা দূর করবে, নাকি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা আরও দেখতে পাব?

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ১২:২৫:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
১৯

ট্রাম্পের কাঁকড়া ব্যবসা: ঢাকায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের নামে ট্রেড লাইসেন্স!

আপডেট: ১২:২৫:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে ই-ট্রেড লাইসেন্সটি ইস্যু করা হয়েছে ১১ মার্চ। ছবি: ডিএনসিসি থেকে সংগৃহীত

ডিএনসিসির অটোমেটেড সিস্টেমে চাঞ্চল্যকর ফাঁকফোকর

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে ই-ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এমনই এক ভুয়া লাইসেন্স ইস্যু করেছে ডিএনসিসি, যেখানে ট্রাম্পের ছবি, নিউইয়র্কের ঠিকানা এবং তার মা-বাবার আসল নামও রয়েছে!

কীভাবে সম্ভব হলো এমন ঘটনা?

ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগ নিশ্চিত করেছে, ১১ মার্চ ট্রাম্পের নামে ইস্যু হওয়া ট্রেড লাইসেন্সের মালিকানা ‘ট্রাম্প এসোসিয়েশন’-এর নামে করা হয়েছে, যার ব্যবসার ধরন ‘কাঁকড়া মাছ বিক্রেতা’। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ঢাকার আফতাবনগরে, যদিও সেটি আদৌ কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়।

লাইসেন্স পেতে নির্ধারিত ২,২৬৫ টাকা ফি পরিশোধ করা হয়েছে এবং মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। লাইসেন্স আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া হয়েছে একটি অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্র ও এক চীনা নাগরিকের বাংলাদেশের ভিসার কপি। তবে, অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভাড়া নেওয়া অফিসের ঠিকানাটিও প্রকৃতপক্ষে আবাসিক ভবন!

ডিএনসিসির গাফিলতি না কি ‘পরীক্ষা’?

ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান স্বীকার করেছেন, এটি আসলে একটি ‘পরীক্ষামূলক’ কাজ ছিল। তাঁর ভাষায়, “আমাদের কর্মীরাই ট্রায়াল হিসেবে এটি করেছেন, দেখানোর জন্য যে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ইলন মাস্ক বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামেও লাইসেন্স হয়ে যেতে পারে।”

স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির ফাঁকফোকর

সাম্প্রতিক সময়ে ডিএনসিসি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুর ব্যবস্থা চালু করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, আবেদনকারীর নথি আপলোড করলেই লাইসেন্স অনুমোদিত হয়, কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই! এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে অসংখ্য লাইসেন্স তৈরি হচ্ছে।

ডিএনসিসির একাধিক কর্মকর্তার মতে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির কারণে ব্যবসা যাচাইয়ের সুযোগ নেই, ফলে অনেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে লাইসেন্স পাচ্ছেন। এমনকি, আগে যেখানে বিশেষ অনুমতি দরকার ছিল, এখন সেসব ছাড়াই লাইসেন্স ইস্যু হয়ে যাচ্ছে।

ঢাকার ব্যবসা জগতে ভূয়া লাইসেন্সের ছড়াছড়ি!

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অব্যবস্থার কারণে একদিকে সরকারি রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতারণার সুযোগও তৈরি হচ্ছে। অনেকে কম ফি দিয়ে ভিন্ন নামে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে, আবার অনেক ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে চললেও বকেয়া ফি না দিয়েই নতুন লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে।

ডিএনসিসি ইতোমধ্যে সমস্যার সমাধানে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে আবাসিক এলাকাগুলোতে ই-ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু বন্ধ করা হবে এবং তথ্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হবে।

উপসংহার: সিস্টেম আপগ্রেড না হলে বিপদ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে ঢাকায় কাঁকড়ার ব্যবসা হয়তো একটি হাস্যকর ঘটনা, কিন্তু এটি দেখিয়ে দিয়েছে, সিস্টেমের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বড় ধরনের প্রতারণা হতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—ডিএনসিসি কি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে এই দুর্বলতা দূর করবে, নাকি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা আরও দেখতে পাব?