📍 নিজস্ব প্রতিবেদক
🗓 ১১ এপ্রিল ২০২৫
রাজধানীর বাজারগুলোতে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা বলছেন, মাঠ থেকে পেঁয়াজ উঠে যাওয়ায় এবং মজুত বাড়ায় বাজারে সরবরাহ কমে গেছে, যার ফলে দাম বেড়েছে।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ জানান, দুই সপ্তাহ আগে টাউন হল বাজার থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছিলেন। আজ রোববার তিনি একই বাজারে গিয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন ৬৫ টাকায়। অর্থাৎ দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
বাজারে কী পরিস্থিতি?
রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে একই পেঁয়াজের দাম আরও ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি। এসব পেঁয়াজ মূলত ফরিদপুর ও মানিকগঞ্জ এলাকা থেকে এসেছে। পাবনার পেঁয়াজের দাম সবচেয়ে বেশি, কিছু বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদনস্থলেই দাম বেড়ে যাওয়ায় ঢাকায় এসেও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. সেলিম মল্লিক বলেন, “আমরা যে দামে কিনছি, তার চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করা সম্ভব না।”
উৎপাদন এলাকায় কী বলছেন কৃষকেরা?
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা, যেটি দেশের অন্যতম বড় পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকা, সেখানেও গত দুই সপ্তাহে দাম বেড়েছে মণপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। আগের দাম ছিল ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, এখন তা ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা (প্রতি কেজি ৫০–৫৫ টাকা)।
ফরিদপুর ও মানিকগঞ্জেও একই চিত্র। ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ময়েনদিয়া বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ এখন ১৮৫০ থেকে ১৯০০ টাকা, মানিকগঞ্জে ৫০ টাকা কেজি।
কেন বাড়ল দাম?
কৃষক ও আড়তদারদের ভাষ্য, এখন জমিতে কোনো পেঁয়াজ নেই। সব পেঁয়াজ উঠিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। যারা মজুত করেছেন, তারা ভবিষ্যতের বাড়তি দামের আশায় বাজারে কম পরিমাণে ছাড়ছেন। আবার উৎপাদন মৌসুমে সংরক্ষণের অযোগ্য পেঁয়াজ বেশি বিক্রি হওয়ায় তখন দাম ছিল কম।
এ ছাড়া এবার ভারতীয় পেঁয়াজ তেমন আমদানি হয়নি, ফলে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে।
মানিকগঞ্জের কৃষক মো. রুবেল হোসেন বলেন, “বৃষ্টির কারণে ফলন কম হয়েছে। এখন দাম একটু বেড়েছে বলে ঘরে রাখা পেঁয়াজ পরে বিক্রি করব।”
কৃষকেরা কী বলছেন?
কৃষকেরা বলছেন, উৎপাদন খরচ তুলতে অনেক কষ্ট হয়েছে। অনাবৃষ্টির কারণে সেচ দিতে হয়েছে তিনবার। ফরিদপুরের চাষি মাফিকুল ইসলাম বলেন, “মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম পাইনি। এখন যে দাম পাচ্ছি, তাতে খরচ উঠছে। কিন্তু লাভ করতে হলে মণপ্রতি অন্তত ৩ হাজার টাকা দরকার।”
টিসিবির তথ্য
সরকারি সংস্থা টিসিবি জানিয়েছে, গত সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০–৫০ টাকা, যা এবার বেড়ে হয়েছে ৪০–৬৫ টাকা। অর্থাৎ ১০ থেকে ১৫ টাকার বৃদ্ধি।