গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির পরও ক্ষুধা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে: ডব্লিউএইচও
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও সেখানে মানবিক পরিস্থিতি বিশেষ করে ক্ষুধা সংকট এখন ‘বিপর্যয়কর’ পর্যায়ে পৌঁছেছে, জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ডব্লিউএইচও প্রধান টেডরস আধানম গেব্রেয়েসুস বলেন, “যুদ্ধবিরতির পরও গাজার মানুষের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য, ওষুধ ও জীবনধারণের উপকরণ পৌঁছাচ্ছে না। ক্ষুধা এখন এমন এক পর্যায়ে, যা মানবিক বিপর্যয়ের সমান।”
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গাজায় অন্তত দুই হাজার টন ত্রাণ প্রবেশের প্রয়োজন থাকলেও বর্তমানে সর্বোচ্চ ৭৫০ টন সরবরাহ হচ্ছে। এর ফলে অন্তত ২৫ শতাংশ গাজাবাসী—যাদের মধ্যে ১১ হাজারের বেশি গর্ভবতী নারী—তীব্র অনাহারে ভুগছেন।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, গাজার ৭০ শতাংশ নবজাতক এখন অপরিণত বা কম ওজনের হয়ে জন্ম নিচ্ছে—যা যুদ্ধ শুরুর আগের (অক্টোবর ২০২৩) সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি। ডব্লিউএইচও সতর্ক করে বলেছে, অপুষ্টি ও খাদ্য সংকটের এই প্রভাব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ৪১টি সাহায্য সংস্থা এক যৌথ চিঠিতে অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ১০ থেকে ২১ অক্টোবরের মধ্যে ৯৯টি বেসরকারি সংগঠন এবং ৬টি জাতিসংঘ সংস্থার ত্রাণ অনুরোধ বাতিল করেছে। তারা বলছে, যুদ্ধবিরতির পরও ত্রাণ পাঠানোকে “অযৌক্তিকভাবে বাধাগ্রস্ত” করা হচ্ছে।
বর্তমানে গাজায় মাত্র দুটি সীমান্তপথ—কেরেম আবু সালেম (দক্ষিণে) ও আল-কারারা (মধ্যাঞ্চলে)—খোলা রয়েছে। ফলে খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য সরঞ্জাম পৌঁছানো মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক সময় অনুমোদিত পণ্যও অগ্রাধিকারভিত্তিতে ঢুকতে পারছে না, ফলে বিস্কুট, কোমল পানীয় বা চকোলেটের মতো অপ্রয়োজনীয় জিনিস ঢুকছে, অথচ শাকসবজি ও বীজজাত পণ্য আটকে দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। যেমন—এক কেজি টমেটোর দাম এখন প্রায় ১৫ শেকেল (৪.৫ ডলার), যা যুদ্ধের আগে ছিল মাত্র ১ শেকেল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ বাড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হবে।
সূত্র: আল জাজিরা।




















