ছবিঃ রয়টার্স
লেখকঃ আনোয়ার বিন মাহামুদ (ব্লগার ও বিশ্লেষক)
দৃশ্যটা যেন অনেক বার দেখা—তবুও প্রতিবার নতুন করে বুকে বেঁধে কষ্ট। মাঠে বসে যন্ত্রণায় কাতর নেইমার, চোখে পানি, মুখ ঢাকতে চাওয়া এক করুণ প্রয়াস। কার্টে করে তাঁকে মাঠের বাইরে নেওয়া হচ্ছে, আর স্টেডিয়ামের বাতাস যেন ভারী হয়ে উঠেছে। আবারও চোট, আবারও দীর্ঘ অনুপস্থিতির আশঙ্কা।
একটা প্রশ্ন সবার মনে ঘুরপাক খায়—আর কতবার?
🎭 নেইমারের ক্যারিয়ার: চোটের সঙ্গে যুদ্ধ
চোট যেন নেইমারের জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সান্তোস থেকে বার্সেলোনা, পিএসজি হয়ে আল হিলাল—সব জায়গাতেই ফুটবলবিশ্ব তাঁর প্রতিভার ঝলক দেখেছে। কিন্তু পাশাপাশি একের পর এক ইনজুরি তাঁর সম্ভাবনাকে থামিয়ে দিয়েছে বারবার।
২০২৩ সালের অক্টোবরেই জাতীয় দলের হয়ে শেষ খেলেন। হাঁটুর গুরুতর চোটে ছিটকে যান। সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরেই আবার ইনজুরি। এমন চক্র থেকে যেন মুক্তি নেই তাঁর।
⚽ বিশেষ দিনেও ছুঁয়ে গেল হতাশা
নেইমারের ১০০তম ম্যাচ ছিল সান্তোসের হয়ে। বিশেষ ম্যাচ, বিশেষ জার্সি, স্টেডিয়ামে উৎসবের আমেজ। কিন্তু মাত্র ৩৪ মিনিটেই সব বদলে গেল। বাঁ ঊরুর পুরোনো চোট ফিরে এল আবার। ব্যথায় কুঁকড়ে যান নেইমার, মাঠেই বসে পড়েন। কার্টে চড়ে মাঠ ছাড়ার সময় চোখের পানি আর ঢেকে রাখা যায়নি।
এই একই চোটেই গত মাসে ব্রাজিল দলের হয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দুই ম্যাচ মিস করেন তিনি। ম্যাচের আগে দুই পায়ে ইনজুরি টেপ, বোঝাই যাচ্ছিল পুরোপুরি ফিট নন। তবুও নিজের শততম ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখার চেষ্টা, শেষমেশ তা রূপ নেয় দুঃস্বপ্নে।
🔁 একটি মৌসুমেরও শান্তি নেই!
২০১৬–১৭ মৌসুমে অন্তত ৩৫টি ম্যাচ খেলেছিলেন নেইমার। এরপর আর কখনোই তিনি একটানা একটি মৌসুমে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারেননি। ইনজুরি যেন বারবার তাঁকে ফেলে দিচ্ছে এক শূন্যতাগ্রস্ত বৃত্তে।
আল হিলালের হয়ে ১৮ মাসে মাত্র ৭টি ম্যাচ খেলতে পেরেছেন। তার চেয়েও বড় হতাশা—সান্তোসে ফেরার পর খেলা ৯টি ম্যাচের মধ্যে পুরো ৯০ মিনিট খেলেছেন কেবল একটিতে।
🧠 নেইমার: প্রতিভা যার, শরীর যার শত্রু
নেইমার কেবল প্রতিভাধর ফুটবলার নন, তিনি ছিলেন একটি প্রজন্মের প্রতীক। মেসি-রোনালদোর সময়েও তাঁর নিজস্ব আলো ছিল। কিন্তু বারবার শরীর তাঁকে ঠেকিয়ে দিয়েছে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাতে।
চোটের কারণে তিনি হয়তো বিশ্বকাপ জিততে পারেননি, ব্যালন ডি’অর ছুঁতে পারেননি, কিন্তু তিনি প্রমাণ করেছেন, বারবার ভাঙা মন নিয়েও মাঠে ফেরা যায়—যেটা কেবল শক্তির নয়, সাহসেরও প্রতীক।
🕊️ ‘প্রিন্স’, আমরা এখনো তোমার সঙ্গেই আছি
সান্তোসের সামাজিক মাধ্যমে লেখা হয়—
“প্রিন্স! পুরো সান্তোস তোমার সঙ্গেই আছে।”
সমর্থকদের এই ভালোবাসা নেইমারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে। কিন্তু দিনশেষে, তিনি জানেন—শরীরের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে একাই তাঁকে লড়তে হবে।
❓ শেষবারের মতো চোখের জল?
ফুটবল বিশ্বের কাছে এখন প্রশ্ন—এই চোখের জল কি শেষবারের মতো?
নাকি ভবিষ্যতে আরও অনেকবার দেখতে হবে একই দৃশ্য—এক রাজপুত্র, যিনি আবার কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়ছেন?
ফুটবল শুধু গোল আর ট্রফির খেলা নয়—এটা আবেগের, বেদনার, বারবার ফিরে আসার গল্পও।
আর নেইমার সেই গল্পেরই এক বর্ণময়, করুণ নায়ক।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, গ্লোবো স্পোর্তে, টাইমস অব ইন্ডিয়া, সান্তোস এফসি