০৪:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫

দুটি টার্মিনালের পর এবার বিদেশিদের হাতে চট্টগ্রাম বন্দর, সমালোচনার ঝড়

নিউজ ডেস্ক

ছবি: সংগৃহীত

লালদিয়া ও পানগাঁও টার্মিনালের পর চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। আগামী ডিসেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তির লক্ষ্যে গত ১৬ই নভেম্বর প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়নের জন্য ৭ সদস্যের কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবিত কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে বন্দর পর্ষদের সদস্য অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব আলম তালুকদারকে। এর আগে সোমবার ঢাকায় দুটি বড় চুক্তি সই হয়। এর একটি হলো ডেনমার্কভিত্তিক মায়েরস্ক গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণ ও ৩৩ বছরের জন্য পরিচালনার চুক্তি। অন্যটি হলো সুইজারল্যান্ডভিত্তিক মেডলগ এসএ’র সঙ্গে পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল ২২ বছরের জন্য পরিচালনার চুক্তি। বন্দরের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনালের মধ্যে পাঁচটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। শ্রমিক সংগঠন থেকে ব্যবসায়ী সব মহলই বলছে, এসব দীর্ঘমেয়াদি গোপন চুক্তি ভবিষ্যতে অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থাপনা অস্বচ্ছ ও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তরের অভিযোগে ক্ষোভ জানিয়েছেন ব্যবহারকারী সংগঠন ও শ্রমিক নেতারা।

সূত্রমতে, এনসিটি পরিচালনার জন্য আবুধাবিভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তির তোড়জোড় চলছে। এনসিটি বর্তমানে নৌবাহিনী পরিচালিত চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেড পরিচালনা করছে। সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে লালদিয়া চর কন্টেইনার টার্মিনালের নির্মাণ ও পরিচালনা চুক্তিতে। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বিদেশি অপারেটররা চাইলে যেকোনো সময় ফি বা চার্জ বাড়াতে পারে। এতে আমদানি-রপ্তানি ব্যয় বাড়বে, বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে এবং রপ্তানিযোগ্য পণ্যের প্রতিযোগিতা কমে যাবে।

জানা গেছে, আগামী ২২শে নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) বিভাগীয় শ্রমিক কনভেনশন থেকে এসব চুক্তির প্রতিবাদে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে। বিদেশিদের বন্দর ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর থেকেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। কিন্তু কয়েক মাস ধরে বড় রাজনৈতিক দলগুলো এ ইস্যুতে নীরব। তবে বামধারার রাজনৈতিক দল এবং শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। চুক্তি সইয়ের পর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে চট্টগ্রাম শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম। চট্টগ্রাম শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদসহ একাধিক শ্রমিক সংগঠন জানায়, বন্দর জাতীয় সম্পদ। বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়া যাবে না। তাদের দাবি, এনসিটি ও সিসিটি বিদেশি অপারেটরদের দেয়া হলে কোটি কোটি টাকা মুনাফা বিদেশে চলে যাবে। তারা এ বিষয়ে ৪০ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে এবং দাবি না মানলে হরতাল, সড়ক অবরোধসহ বড় কর্মসূচি ঘোষণা করবে। নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড কোম্পানিকে ইজারা দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ‘চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদের উদ্যোগে’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর হালিশহর বড়পুল ওয়াপদার সামনে থেকে মশাল মিছিল বের হয়। মিছিলে শ্রমিকরা ‘আমার বন্দর আমার মা, বিদেশিদের দেবো না’।

চট্টগ্রাম জেলা ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি তপন দত্ত বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আসলে বিদেশিদের স্বার্থ দেখছে। নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে দেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই তারা দুইটি বন্দর নিয়ে চুক্তি করেছে। তারা দেশকে কখনো সিঙ্গাপুর বানায়, এখন আবার চায়না বানাবে। চট্টগ্রাম বন্দর একটা লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এটা বিদেশিদের হাতে তুলে দিলে অনেক লোক বেকার হয়ে যাবে। গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য হাসান মারুফ রুমী বলেন, বন্দর উন্নয়নের নাম করে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। দুইদিন আগের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বন্দর আগের চেয়ে ২১ ভাগ বেশি আয় করেছে। যদি দক্ষতা বাড়াতে হয় তাহলে বিদেশি ট্রেইনার আনা যায়। দক্ষতার নামে এদেশের বন্দর ইজারা দেয়ার অধিকার নেই। বন্দর বিদেশিদের হাতে দিলে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে আগুন জ্বলবে।

চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদের মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অত্যাধুনিক টার্মিনাল। এই টার্মিনাল দিয়ে আমদানিতে বর্তমান ট্যারিফ অনুযায়ী প্রতি ইউনিট কন্টেইনারে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় ১৬৫ ডলার হারে আয় হয়। আর টার্মিনাল অপারেটরকে বিল দেয়া হয় গড়ে ১০ ডলার। অন্যান্য খরচ হয় আনুমানিক ৪০ ডলার। চট্টগ্রাম বন্দরের নিট আয় হয় ১১৫ ডলার। যদি ডিপি ওয়ার্ল্ড আমাদের বন্দরকে মাত্র ৫০ ডলার হারে মাশুল দেয় তাহলে ডিপি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবে প্রতি ইউনিট কন্টেইনারে ৬৫ ডলার। তারাই যদি উক্ত টার্মিনালটি পরিচালনা করে তাহলে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী ডিপি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ থেকে বছরে এক হাজার একশ’ সাতচল্লিশ কোটি পাঁচ লাখ আটাশি হাজার দুইশত পঁয়ত্রিশ টাকা নিয়ে যাবে। এই বিপুল পরিমাণ ডলার বিদেশে চলে গেলে বাংলাদেশকে ব্যাপকভাবে ডলার সংকটে পড়বে। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক ও ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের নেতা সীকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, আমরা বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধী নই। তবে সেটা হতে হবে ন্যায্য। উন্মুক্ত টেন্ডারের ভিত্তিতে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম জোনাল হেড মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, কোনো দরপত্র ছাড়াই পতিত স্বৈরাচারের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক বিদেশি কোম্পানিকে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল তুলে দেয়ার যাবতীয় ষড়যন্ত্র চলমান। এ ছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি টার্মিনালের বিষয়েও ইন্টেরিম সরকারের বর্তমান সিদ্ধান্তে জনগণের মাঝে ক্ষোভ ও ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

সূত্র-মানবজমিন।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ১১:৪৮:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
২০

দুটি টার্মিনালের পর এবার বিদেশিদের হাতে চট্টগ্রাম বন্দর, সমালোচনার ঝড়

আপডেট: ১১:৪৮:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫

লালদিয়া ও পানগাঁও টার্মিনালের পর চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। আগামী ডিসেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তির লক্ষ্যে গত ১৬ই নভেম্বর প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়নের জন্য ৭ সদস্যের কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবিত কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে বন্দর পর্ষদের সদস্য অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব আলম তালুকদারকে। এর আগে সোমবার ঢাকায় দুটি বড় চুক্তি সই হয়। এর একটি হলো ডেনমার্কভিত্তিক মায়েরস্ক গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণ ও ৩৩ বছরের জন্য পরিচালনার চুক্তি। অন্যটি হলো সুইজারল্যান্ডভিত্তিক মেডলগ এসএ’র সঙ্গে পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল ২২ বছরের জন্য পরিচালনার চুক্তি। বন্দরের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনালের মধ্যে পাঁচটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। শ্রমিক সংগঠন থেকে ব্যবসায়ী সব মহলই বলছে, এসব দীর্ঘমেয়াদি গোপন চুক্তি ভবিষ্যতে অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থাপনা অস্বচ্ছ ও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তরের অভিযোগে ক্ষোভ জানিয়েছেন ব্যবহারকারী সংগঠন ও শ্রমিক নেতারা।

সূত্রমতে, এনসিটি পরিচালনার জন্য আবুধাবিভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তির তোড়জোড় চলছে। এনসিটি বর্তমানে নৌবাহিনী পরিচালিত চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেড পরিচালনা করছে। সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে লালদিয়া চর কন্টেইনার টার্মিনালের নির্মাণ ও পরিচালনা চুক্তিতে। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বিদেশি অপারেটররা চাইলে যেকোনো সময় ফি বা চার্জ বাড়াতে পারে। এতে আমদানি-রপ্তানি ব্যয় বাড়বে, বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে এবং রপ্তানিযোগ্য পণ্যের প্রতিযোগিতা কমে যাবে।

জানা গেছে, আগামী ২২শে নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) বিভাগীয় শ্রমিক কনভেনশন থেকে এসব চুক্তির প্রতিবাদে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে। বিদেশিদের বন্দর ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর থেকেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। কিন্তু কয়েক মাস ধরে বড় রাজনৈতিক দলগুলো এ ইস্যুতে নীরব। তবে বামধারার রাজনৈতিক দল এবং শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। চুক্তি সইয়ের পর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে চট্টগ্রাম শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম। চট্টগ্রাম শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদসহ একাধিক শ্রমিক সংগঠন জানায়, বন্দর জাতীয় সম্পদ। বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়া যাবে না। তাদের দাবি, এনসিটি ও সিসিটি বিদেশি অপারেটরদের দেয়া হলে কোটি কোটি টাকা মুনাফা বিদেশে চলে যাবে। তারা এ বিষয়ে ৪০ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে এবং দাবি না মানলে হরতাল, সড়ক অবরোধসহ বড় কর্মসূচি ঘোষণা করবে। নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড কোম্পানিকে ইজারা দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ‘চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদের উদ্যোগে’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর হালিশহর বড়পুল ওয়াপদার সামনে থেকে মশাল মিছিল বের হয়। মিছিলে শ্রমিকরা ‘আমার বন্দর আমার মা, বিদেশিদের দেবো না’।

চট্টগ্রাম জেলা ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি তপন দত্ত বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আসলে বিদেশিদের স্বার্থ দেখছে। নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে দেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই তারা দুইটি বন্দর নিয়ে চুক্তি করেছে। তারা দেশকে কখনো সিঙ্গাপুর বানায়, এখন আবার চায়না বানাবে। চট্টগ্রাম বন্দর একটা লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এটা বিদেশিদের হাতে তুলে দিলে অনেক লোক বেকার হয়ে যাবে। গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য হাসান মারুফ রুমী বলেন, বন্দর উন্নয়নের নাম করে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। দুইদিন আগের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বন্দর আগের চেয়ে ২১ ভাগ বেশি আয় করেছে। যদি দক্ষতা বাড়াতে হয় তাহলে বিদেশি ট্রেইনার আনা যায়। দক্ষতার নামে এদেশের বন্দর ইজারা দেয়ার অধিকার নেই। বন্দর বিদেশিদের হাতে দিলে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে আগুন জ্বলবে।

চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদের মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অত্যাধুনিক টার্মিনাল। এই টার্মিনাল দিয়ে আমদানিতে বর্তমান ট্যারিফ অনুযায়ী প্রতি ইউনিট কন্টেইনারে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় ১৬৫ ডলার হারে আয় হয়। আর টার্মিনাল অপারেটরকে বিল দেয়া হয় গড়ে ১০ ডলার। অন্যান্য খরচ হয় আনুমানিক ৪০ ডলার। চট্টগ্রাম বন্দরের নিট আয় হয় ১১৫ ডলার। যদি ডিপি ওয়ার্ল্ড আমাদের বন্দরকে মাত্র ৫০ ডলার হারে মাশুল দেয় তাহলে ডিপি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবে প্রতি ইউনিট কন্টেইনারে ৬৫ ডলার। তারাই যদি উক্ত টার্মিনালটি পরিচালনা করে তাহলে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী ডিপি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ থেকে বছরে এক হাজার একশ’ সাতচল্লিশ কোটি পাঁচ লাখ আটাশি হাজার দুইশত পঁয়ত্রিশ টাকা নিয়ে যাবে। এই বিপুল পরিমাণ ডলার বিদেশে চলে গেলে বাংলাদেশকে ব্যাপকভাবে ডলার সংকটে পড়বে। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক ও ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের নেতা সীকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, আমরা বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধী নই। তবে সেটা হতে হবে ন্যায্য। উন্মুক্ত টেন্ডারের ভিত্তিতে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম জোনাল হেড মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, কোনো দরপত্র ছাড়াই পতিত স্বৈরাচারের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক বিদেশি কোম্পানিকে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল তুলে দেয়ার যাবতীয় ষড়যন্ত্র চলমান। এ ছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি টার্মিনালের বিষয়েও ইন্টেরিম সরকারের বর্তমান সিদ্ধান্তে জনগণের মাঝে ক্ষোভ ও ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

সূত্র-মানবজমিন।