০৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

পলিটেকনিক আন্দোলনের মুখে অধ্যক্ষ বদলি: সমাধান, না সাময়িক ছাঁকনি?

ডেস্ক নিউজ

মো. মোস্তাফিজুর রহমান খানছবি: ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

লেখক: আনোয়ার বিন মাহামুদ (ব্লগার ও বিশ্লেষক)

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান খানকে সরিয়ে দিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত এসেছে এক সন্ধ্যাবেলায়, রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে। ঠিক সেই সময়টিতেই সারাদেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ আর ‘রেল ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘনীভূত হচ্ছিল। প্রজ্ঞাপন বলছে, জনস্বার্থে এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, এই সিদ্ধান্ত কি সমস্যার মূল জায়গাটিতে আঘাত করেছে, নাকি শুধু চেহারা পাল্টে মূল কাঠামোকে অক্ষত রাখার কৌশল?

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা দাবিতে সরব। ছয় দফা দাবির মাঝে রয়েছে তাদের ডিপ্লোমা ডিগ্রির স্বীকৃতি, ইন্ডাস্ট্রি বেজড কারিকুলাম, চাকরির ক্ষেত্রে সমতা ও পাঠ্যপুস্তক সমস্যা—যা দীর্ঘদিনের অসন্তোষের ফল। এই দাবিগুলো নতুন নয়, কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও আন্দোলন না হলে কর্তৃপক্ষ কানে তুলতো কি?

শিক্ষার্থীরা মনে করেন, অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের প্রশাসনিক আচরণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরের অচলাবস্থা অনেকটাই এই বিক্ষোভকে উস্কে দিয়েছে। তাই তাঁকে সরিয়ে দেওয়াকে তারা নিজেদের আন্দোলনের আংশিক বিজয় হিসেবে দেখছে।

অধ্যক্ষ বদলি: প্রতীকী পদক্ষেপ না বাস্তব সমাধান?

সরকারি ভাষায় বলা হয়েছে, “জনস্বার্থে পদক্ষেপ”, কিন্তু বাস্তবে এটি আন্দোলনের চাপ সাময়িকভাবে কমানোর একটি কৌশল হিসেবেই অধিকাংশ বিশ্লেষক দেখছেন। কারণ, শিক্ষার্থীদের দাবি শুধুই কোনো একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়; এটি একটি গভীর নীতিগত ও কাঠামোগত সংস্কারের দাবি

অধ্যক্ষ সরিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না, যদি না তা হয় একটি বড় সংস্কার প্রক্রিয়ার সূচনা। এ পর্যন্ত আন্দোলনের মূল দাবিগুলো নিয়ে স্পষ্ট কোনো সরকারি প্রতিক্রিয়া আসেনি, বরং বদলির মতো পদক্ষেপ একরকম শান্ত করার কৌশল বলে মনে হচ্ছে।

সমাধানের পথে কী থাকা উচিত?

এখানে প্রয়োজন অন্তত তিনটি পদক্ষেপ:

  1. খোলামেলা সংলাপ – শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি উন্মুক্ত সংলাপ জরুরি। শুধুমাত্র নির্দেশনা নয়, বরং যৌথভাবে সমাধান খোঁজার চেষ্টা থাকা দরকার।

  2. নীতিগত স্বীকৃতি – পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ডিপ্লোমা ডিগ্রির স্বীকৃতি ও চাকরির সমতাভিত্তিক নীতিমালা দ্রুত নির্ধারণ করা দরকার, যেন তারা দীর্ঘমেয়াদে নিরাপত্তা পায়।

  3. প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি – কেবল অধ্যক্ষ নয়, পুরো কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থায় জবাবদিহিতার কাঠামো থাকা জরুরি, যাতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এককভাবে অনিয়মে ডুবে না যায়।

শেষ কথা

শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর শুধু বিক্ষোভের শব্দে সীমাবদ্ধ না রেখে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণের অংশ করে তোলাই হবে বাস্তব সমাধানের পথ। অধ্যক্ষের বদলি সেই পথে এক ছোট্ট পদক্ষেপ হতে পারে, কিন্তু যদি তার পেছনে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল না থাকে, তাহলে এটি শুধু ‘লক্ষ্মণরেখার বাইরে গরু ঠেলানোর’ মতোই হবে—দৃশ্য বদলাবে, ভিত বদলাবে না।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ১১:১৪:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

পলিটেকনিক আন্দোলনের মুখে অধ্যক্ষ বদলি: সমাধান, না সাময়িক ছাঁকনি?

আপডেট: ১১:১৪:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

মো. মোস্তাফিজুর রহমান খানছবি: ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

লেখক: আনোয়ার বিন মাহামুদ (ব্লগার ও বিশ্লেষক)

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান খানকে সরিয়ে দিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত এসেছে এক সন্ধ্যাবেলায়, রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে। ঠিক সেই সময়টিতেই সারাদেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ আর ‘রেল ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘনীভূত হচ্ছিল। প্রজ্ঞাপন বলছে, জনস্বার্থে এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, এই সিদ্ধান্ত কি সমস্যার মূল জায়গাটিতে আঘাত করেছে, নাকি শুধু চেহারা পাল্টে মূল কাঠামোকে অক্ষত রাখার কৌশল?

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা দাবিতে সরব। ছয় দফা দাবির মাঝে রয়েছে তাদের ডিপ্লোমা ডিগ্রির স্বীকৃতি, ইন্ডাস্ট্রি বেজড কারিকুলাম, চাকরির ক্ষেত্রে সমতা ও পাঠ্যপুস্তক সমস্যা—যা দীর্ঘদিনের অসন্তোষের ফল। এই দাবিগুলো নতুন নয়, কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও আন্দোলন না হলে কর্তৃপক্ষ কানে তুলতো কি?

শিক্ষার্থীরা মনে করেন, অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের প্রশাসনিক আচরণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরের অচলাবস্থা অনেকটাই এই বিক্ষোভকে উস্কে দিয়েছে। তাই তাঁকে সরিয়ে দেওয়াকে তারা নিজেদের আন্দোলনের আংশিক বিজয় হিসেবে দেখছে।

অধ্যক্ষ বদলি: প্রতীকী পদক্ষেপ না বাস্তব সমাধান?

সরকারি ভাষায় বলা হয়েছে, “জনস্বার্থে পদক্ষেপ”, কিন্তু বাস্তবে এটি আন্দোলনের চাপ সাময়িকভাবে কমানোর একটি কৌশল হিসেবেই অধিকাংশ বিশ্লেষক দেখছেন। কারণ, শিক্ষার্থীদের দাবি শুধুই কোনো একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়; এটি একটি গভীর নীতিগত ও কাঠামোগত সংস্কারের দাবি

অধ্যক্ষ সরিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না, যদি না তা হয় একটি বড় সংস্কার প্রক্রিয়ার সূচনা। এ পর্যন্ত আন্দোলনের মূল দাবিগুলো নিয়ে স্পষ্ট কোনো সরকারি প্রতিক্রিয়া আসেনি, বরং বদলির মতো পদক্ষেপ একরকম শান্ত করার কৌশল বলে মনে হচ্ছে।

সমাধানের পথে কী থাকা উচিত?

এখানে প্রয়োজন অন্তত তিনটি পদক্ষেপ:

  1. খোলামেলা সংলাপ – শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি উন্মুক্ত সংলাপ জরুরি। শুধুমাত্র নির্দেশনা নয়, বরং যৌথভাবে সমাধান খোঁজার চেষ্টা থাকা দরকার।

  2. নীতিগত স্বীকৃতি – পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ডিপ্লোমা ডিগ্রির স্বীকৃতি ও চাকরির সমতাভিত্তিক নীতিমালা দ্রুত নির্ধারণ করা দরকার, যেন তারা দীর্ঘমেয়াদে নিরাপত্তা পায়।

  3. প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি – কেবল অধ্যক্ষ নয়, পুরো কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থায় জবাবদিহিতার কাঠামো থাকা জরুরি, যাতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এককভাবে অনিয়মে ডুবে না যায়।

শেষ কথা

শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর শুধু বিক্ষোভের শব্দে সীমাবদ্ধ না রেখে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণের অংশ করে তোলাই হবে বাস্তব সমাধানের পথ। অধ্যক্ষের বদলি সেই পথে এক ছোট্ট পদক্ষেপ হতে পারে, কিন্তু যদি তার পেছনে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল না থাকে, তাহলে এটি শুধু ‘লক্ষ্মণরেখার বাইরে গরু ঠেলানোর’ মতোই হবে—দৃশ্য বদলাবে, ভিত বদলাবে না।