এসএসসি পরীক্ষার্থী কমেছে, অনুপস্থিতিও বেশি — কেন এমন হলো?
ছবিঃ দা ডেইলি স্টারের সৌজন্যে
লেখক: আনোয়ার বিন মাহামুদ (শিক্ষা বিশ্লেষক ও ব্লগার)
২০২৪ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দেশজুড়ে দেখা গেল ব্যতিক্রমধর্মী এক চিত্র—গতবারের তুলনায় পরীক্ষার্থী এক লাখের মতো কম, আর অনুপস্থিতির হারও আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। এই প্রবণতা কেবল কোনো একটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়; বরং সারাদেশে প্রায় একই রকম চিত্র।
ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাওয়াল রাজবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের তথ্য তার একটি ছোট উদাহরণ মাত্র—সেখানে এবার পরীক্ষার্থী ১০২ থেকে নেমে এসেছে ৭৫ জনে।
প্রশ্ন জাগে—এর পেছনের কারণ কী?
🔍 পরীক্ষার্থী কমার পেছনে প্রধান কারণগুলো:
১. অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে যাওয়া
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার জানিয়েছেন, গত বছর পাসের হার বেশি হওয়ায় (৮৩%) এ বছর অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এটি পরীক্ষার্থী কমার একটি বড় কারণ।
২. করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
২০২০ সালে যারা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, তারাই এখন এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। অথচ তাদের শিক্ষাজীবনের সূচনাই হয় মহামারির মধ্য দিয়ে। প্রায় দুই বছর শিক্ষা কার্যক্রম ছিল অনিয়মিত ও অনলাইনে সীমাবদ্ধ। ফলে এই ব্যাচে ঝরে পড়া, মনোযোগ হারানো এবং পরীক্ষার ভীতি—সবই একত্রে কাজ করেছে।
৩. বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রমের প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনা পরবর্তী সময়ে পরিবারের আর্থিক সংকট অনেক শিক্ষার্থীকে বাল্যবিবাহ, কিংবা শ্রমে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ ও দরিদ্র পরিবারে এ ধরনের ঘটনা বেশি দেখা গেছে, যার প্রভাব পড়েছে পরীক্ষার্থী সংখ্যায়।
৪. রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পরীক্ষার কড়াকড়ি
শিক্ষাবোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবার পরীক্ষার নিয়মকানুন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল বেশ কড়া। অনেক পরীক্ষার্থী হয়তো আশঙ্কা করেছে পারফরমেন্স নিয়ে, ফলে ইচ্ছাকৃতভাবেই অনুপস্থিত থেকেছে। এছাড়া সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপোড়েনও কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে।
📉 অনুপস্থিতির উদ্বেগজনক হার
পরিসংখ্যান বলছে, পরীক্ষার প্রথম দিন অনুপস্থিত ছিল প্রায় ২৬ হাজার ৯২৮ জন। দ্বিতীয় দিন এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৯৪৩ জনে। যেখানে গত বছর প্রথম দিন অনুপস্থিত ছিল ১৯ হাজারের মতো।
এই সংখ্যা শুধু সংখ্যাই নয়—এ যেন হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ঝরে পড়ার চিত্র।
🧠 বিশেষজ্ঞদের মত: গবেষণা এখন সময়ের দাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান সঠিকভাবে বলেছেন—“এই প্রবণতা বুঝতে হলে জরুরি ভিত্তিতে গবেষণা প্রয়োজন।” আন্দাজের ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণ হলে তা দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ নাও হতে পারে।
✅ উপসংহার: কেবল সংখ্যা নয়, মানবিক সংকেতও
এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ কেবল একটি একাডেমিক ঘটনা নয়—এটি একজন শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সামাজিক অবস্থানেরও প্রতিফলন। তাই পরীক্ষার্থী কমা এবং অনুপস্থিতির হার বেড়ে যাওয়া শুধুই পরিসংখ্যান নয়, এটি একটি সামাজিক সংকেতও।
সঠিক গবেষণা, কার্যকর নীতিমালা এবং শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে না পারলে সামনের বছরগুলোতে এই সংকট আরও গভীর হতে পারে।
আপনার মতামত কী? এসএসসি পরীক্ষার্থী কমে যাওয়া কি নিছক কাকতালীয়, নাকি বড় কোনো সামাজিক সংকেত? মন্তব্যে জানান।